অর্ধ শতাব্দি পেরিয়ে গেলেও সংষ্কার হয়নি সড়াতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন। ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের সড়াতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই আধাপাকা ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৭২ সালে। এখন ভবনের দেওয়াল গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। খুলে পড়ছে পলেস্তারা। মেঝের আস্তোরণ উঠে গেছে অনেক আগেই। স্যাঁত সেঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এই ভবনে বসে ক্লাস করছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বেসরকারিভাবে পরিচালিত হতো সে সময় এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় একটি আধাপাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন ছাত্র সংখ্যা কম থাকায় এই ভবনেই সকল ক্লাস চলত। পরবর্তীতে ছাত্র সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়াতৈল গ্রামবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এই স্কুল অঙ্গনে ২ কক্ষের একটি এক তলা বিল্ডিং নির্মাণ করে দেওয়া হয়। নতুন এই ভবনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। অবশিষ্ট শিশু শ্রেণি, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস পুরাতন জরাজীর্ণ ধ্বংসপ্রায় ভবনেই নিতে হয়। বর্তমানে এই স্কুলে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২৩০ জন। শিক্ষক সংখ্যা ৭। এই ভবনের অবস্থা এখন একেবারেই বেহাল। ভবনের চালার টিনগুলো মরিচা ধরে অসংখ্যা ফুটো হয়ে গেছে। বর্ষা বৃষ্টির দিনে চাল দিয়ে পানি পড়ে। দেওয়ালের অনেক জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। সিমেন্টের প্রলেপ খুলে পড়ছে প্রতিনিয়তই। মেঝের সিমেন্ট উঠে গেছে অনেক আগে। জানালা দরজা ভেঙ্গে গেছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এই ভবনেই বসে পাঠ গ্রহণ করছে।
স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেলিনা, আয়সা, সিয়াম হোসেন জানান, ভাঙ্গা দালানে অনেক দিন ধরে ক্লাস করছি। এখানে বসার কোন পরিবেশ নেই। একেবারে দমবন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও নিরুপায় হয়ে আমাদেরকে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমরা এই ভবনটি সংষ্কারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা জানান, তাদের সন্তানেরা ব্যবহারের অনুপযোগী ধ্বংস প্রায় টিনশেট ভবনে ক্লাস করছে। ভবনটি যখন তখন ভেঙ্গে পড়তে পারে। জীবনের ঝুকি নিয়ে একেবারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে। তারা বহুবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাদৎ হোসেন মল্লিক জানান, উক্ত আধা-পাকা ভবনটি সংষ্কারের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অনেক বার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংষ্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ছানোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সড়াতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার কথা স্বীকার করেন। এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে সড়াতৈল প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উল্লাপাড়ার আরও কয়েকটি স্কুলের ভবন সংষ্কারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি।