এহছানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি:
কাঁধে ঝুলানো একটি বাউক(বাঁশের তৈরি হাতল)। তার দুই পাশে দড়িতে ঝুলানো দুটি বড় পাতিল। পানিভর্তি পাতিলে মাছের পোনা। ২ পাতিলে থাকা মাছের পোনা ও পানিসহ প্রায় ৫০ কেজি ওজন। এভাবেই প্রতিদিন মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাছের পোনা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন হারুন অর রশিদ(৭০)।
৭০ বছরের জীবনে ৪০ বছর ধরে ফেরি করে মাছের পোনা বিক্রি করে চলেছেন তিনি! এ যেন এক শেষ না হওয়া গল্প। এ আয়েই ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিন ছেলেকেও লালন-পালন করে বড় করেছেন। ছেলেরা এখন নিজেদের সংসার ও কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে হারুন এখনও সংসারের গ্লানি টানছেন। পোনা বিক্রির আয়ে তিনি নিজের সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের এখনও দেখবাল করেন।
আজ( ৩ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের মাইজবাগ পাছাপাড়া গ্রামে দেখা মেলে হারুনের।
সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।
এসময় হারুন জানান, ফজরের আজানে ঘুম ভাঙার পর বাড়ির কিছু কাজ শেষ করেন। তারপর সকালের খাবার খেয়েই বের পড়েন পোনা সংগ্রহে। পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছের পোনা সংগ্রহ করেন তিনি। তারপর পানিভর্তি পাতিলে পোনা ভরে ফেরি করে ছুটেন বিক্রির উদ্দেশ্যে।
হারুনের বাড়ি নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের সাভার গ্রামে। তিনি একই গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রহিমের ছেলে।
কাঁধে মাছের পোনা ফেরি করে একটু পরপর হারুন হাঁকডাক দিয়ে বলছেন,'এই পোনা লাগবে পোনা,ভালো মানের মাছের পোনা।' এভাবে কিছুদূর গিয়ে একটু বিশ্রাম নেন,ফের ছুটেন হারুন। কথা বলার ছলে এই প্রতিবেদক ১ কিলোমিটার হাটেন হারুনের সঙ্গে। আলাপকালে হারুন বলেন,'৫৫ বছরের বিবাহিত সংসার তার। বিয়ের পর থেকেই তিনি ফেরি করে মাছের পোনা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান,দৈনিক ১ থেকে ২ হাজার টাকা মাছের পোনা বিক্রি করতে পারেন। এতে ৪০০-৬০০ টাকা লাভ হয় তার।
পোনা বিক্রেতা হারুন বলেন,'এখন আগের মতো পোনা বিক্রি করতে পারি না। বয়স হয়েছে, তাই বাউক ফেরি করে বেশিদূর যাইতে পারি না।কিছুদূর যেতেই বিশ্রাম নিতে হয়। তারপরও পেটের দায়ে ছুটতে হয়। আগে যখন শরীরে শক্তি আছিন,তখন জোরে জোরে হেঁটে অনেক পথ যেতে পারতাম। সেসময় ৪-৬ ডেগ(পাতিল) মাছের পোনা বিক্রি করতে পারতাম,এখন ২ ডেগ পোনা বিক্রি করতেও কষ্ট হয়। তবুও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া নিজে ইনকাম করে খাইতে(খেতে) পারতাছি।
মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম(৫৮) বলেন,'বহুবছর ধরে হারুন ভাইকে মাছের পোনা বিক্রি আসছেন। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখি তিনি মাছের পোনা বিক্রি করে চলছেন। এই বয়সে এসেও তিনি অনেক ওজন ফেরি করে মাছের পোনা বিক্রি করেন।
এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা
রাশেদুল ইসলাম বলেন,' হারুনের মতো এমন অনেক মানুষ ফেরি করে মাছের পোনা বিক্রির মধ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এতে একদিকে তারা যেমন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন, অন্যদিক মানুষের আমিষের ঘাতটি পূরণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat