দৃশ্যপট ডেস্ক:
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার উষালগ্নে ঘোষণা দিয়েছি, আমরা প্রতিশোধ নেব না, প্রতিশোধ নেওয়ার মানে হলো আইন হাতে তুলে নেওয়া। আইন যেখানেই হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে সেখানেই বিশৃংখলা তৈরি হয়েছে। প্রতিশোধ প্রতিহিংশার জন্ম দেয়। আমরা চাই এই নোংরা কাজের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটুক। তবে ন্যায় ও ইনসাফের দাবী হচ্ছে যিনি অপরাধ করেছেন, নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য তাকে তাকে আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শাস্তি পেতে হবে। যদি সে আইনের শাসন বাংলাদেশে কায়েম হয়, তবে আগামীর বাংলাদেশ আর পথ হারাবে না।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের দারুল ইসলামী একাডেমী মাঠে সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার রাস্তায় উঠেছে, গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকুক। কোন অপশক্তি যদি বাংলাদেশকে এই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোট তাদের প্রতিহত করবে। এই সময় জাতীয় ঐক্যের বড়ই প্রয়োজন।
জাতির মৌলিক ইস্যুতে সবাইকে এক থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয় সমালোচনা করবে। আবার সাথে সাথে এই সরকার যাতে সংস্কারের কাজগুলো করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগীতা করতে হবে। সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলার মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়লো, লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করে বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করলো। বাংলাদেশে একটি মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য্য হয়ে পড়লো। সেই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন হলো। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ সুবিচার, সুশাসন আশা করেছিল। কিন্তু জনগণের সমস্ত আশায় গুড়েবালি। সবকিছূকে ব্যর্থ করে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে লুট আর খুনের রাজত্ব কায়েম হলো। স্বাধীনতা আরেকবার হারিয়ে গেল। সেই গবহর থেকে বাংলাদেশ উঠে আসতে পারেনি। বিগত সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলে নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? জাতির রক্ত চুষে নেওয়ার বিনিময়ে, সকল দলকে কোনঠাসা করে আবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করার বিনিময়ে। এ কারণে জনগণের মনে খুব যন্ত্রণা ও কষ্ট।
সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর। এক থেকে এগারো শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, জেলের ভিতরে তাদেরকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারাই করেছেন, তাদের উপর গোলাবারুদ নেমে এসেছে। শত শত সাথী-সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় সারি সারি লাশ আর ছুপ ছুপ রক্ত তারা জাতিকে উপহার দিয়েছে। আমরা বারবার আন্দোলন করেছি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, এই অপশক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছি। তার পুঞ্জীভূত ফল হচ্ছে ছাত্র-জনতার একটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসককে বিদায় নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের কোন দায়িত্বশীল নেতা যাদের অন্যায় অযৌক্তিক অভিযোগ দায়ের করে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে তাদের কেউ পালিয়ে যাননি এবং পালিয়ে যাওয়ার জন্য এক সেকেন্ডও চেষ্টা করেননি। কারণ আমাদের কোন মামার দেশ নেই মাসির দেশ নেই দাদার দেশ নেই। আল্লাহ এখানে জন্ম দিয়েছেন, এই দেশকে বুকে আগলে ধরেই বেঁচে থাকতে চাই। এ দেশের সুখ-শান্তির সাথে আমাদের অন্তরের সম্পর্ক মিশে আছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক মজলুম দলগুলোর বিরুদ্ধে আপনাদেরও কলম চলেছে। অনেকেই বলেন চাপের কাছে আমরা অসহায় ছিলাম। আর শাসকরা বরাবরই বলেছে মিডিয়া স্বাধীন। কতটুকো স্বাধীন সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা সেই স্বাধীনতার ফল দেখতে পারি নাই। এ জন্য আপনাদেরকে দায়ী করবো না এবং অতিতেও ফিরে যাবো না। এখন আপনার মুক্ত , আমরা দাবী করবো আপনার যাতে আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
জামায়াতরে আমীর আরও বলেন, আমরাই শুধু মজলুম ছিলাম না, বিএনপি ছিল অন্যান্য সংগঠনও ছিল। এমনকি রাস্তার ভিক্ষুও তাদের জুলুম থেকে রক্ষা পায়নি।
আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এমন রাজনীতি কেন করতে হবে, যে রাজনীতি করার পর আপনাকে পালানোর রাস্তা খুজতে হবে, সীমান্তে গিয়ে কলাপাতায় ঘুমোতে হবে। দিনশেষে আপনি যাতে সম্মানের সাথে দাঁড়ায়ে থাকতে পারেন এমন রাজনীতি করা উচিৎ ছিল।
তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে তিনি (শেখ হাসিনা) নাকি সীমান্তের ওপারে গিয়ে বলেন টুস করে ঢুকে পড়বো। আপনি গেলেন কেন? আপনাকে কে যেতে বলেছিল? আপনি সবসময় বলতে আইন সবার জন্য সমান এবং আদালত স্বাধীন। এটা একটু দেখা দরকার ছিল। আপনার এই কথাই প্রমাণ করে দিতেন, এটাই ছিল আপনার রাজনীতিবিদসুলভ আচরণ। আপনার আসবেন, আপনার আসা উচিৎ, কারণ যা করেছেন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে তা দেখা দরকার। লক্ষ লক্ষ মানুষকে দফায় দফায় আপনি আদালতে নিয়েছেন, মা বোনদেরকেও ছাড় দেননি। আপনি আসুন, এরকম আরও যারা আছেন তাদেরও আসা উচিৎ। এটাই মানবতার দাবী।
জেলা জামায়াতের আমীর মওলানা অধ্যক্ষ শাহীনুর আলমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল মওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সুরা সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির এ্যাড. ড. হেলাল উদ্দিন, পাবনা জেলার আমীর মো. আবু তালেব মন্ডল, কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আলী আলম ও মওলানা আব্দুস সালাম। বিকেলে দারুল ইসলামী একাডেমী মাঠে আয়োজিত জেলা জামায়াতের জনসমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat