দৃশ্যপট ডেস্ক:
অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ দরিদ্র কৃষক পরিবারের ৫/৬ জন যুবক অর্থ উপার্জনের জন্য ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই লক্ষ্যে ঢাকার রায়ের বাজারের মোবাইল এক্সসোরিজ ও সুদ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন চঞ্চলকে প্রায় ৩০/৩২ লাখ টাকা দেন তারা। কিন্তু বিদেশে পাঠানোর নামে নানা টালবাহানা করতে থাকেন চঞ্চল। টাকাও ফেরত দেন না। ফলে চঞ্চলকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তারা। পরিকল্পনা মোতাবেক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হত্যার পর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নিঝুরি এলাকায় ব্রীজের নিচে ফেলে দেওয়া হয় কামাল হোসেন চঞ্চলকে (৩০)।
চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস এ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে এসব তথ্য জানান, সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার এম, এন মোর্শেদ। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি থানার পাইকেড়সাড়া গ্রামের মো. আলীম হোসাইনের ছেলে মো. রাসেল হোসাইন (২২), একই থানার বারইটারি গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে নাসিদুরজ্জামান নসিব (২৩) ও একই গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে কফিলুর রহমান কফিল (২৩)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী একজন পড়াশোনা বাদ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই এসপি বলেন, ভিকটিম কামাল হোসেন চঞ্চল মোবাইল এক্সসোরিজ ও সমবায় সমিতি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার দোকানের কর্মচারি ছিল ভুরুঙ্গামারি থানার বারইটারি গ্রামের ইসমাইলের ছেলে রবিউল। রবিউলের মাধ্যমে তার এলাকার ৫/৬ জন যুবক কামাল হোসেন চঞ্চলকে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ৫ থেকে ৬ লাখ করে টাকা দেন।
কিন্তু তাদের বিদেশে পাঠাতে গরিমসি করছিল চঞ্চল। এভাবে ৬/৭ মাস পর যখন শিক্ষার্থীরা দেখে চঞ্চল তাদের ইতালি পাঠানো বা টাকা ফেরত কোনটাই করছে না। তখন তারা ঢাকা থেকে চঞ্চলকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২২ ফেব্রুয়ারি ভুরুঙ্গামারি থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় যায়। রাতে তারা সেখানে অবস্থান করে। ২৩ তারিখে কৌশলে কামাল হোসেন চঞ্চলকে মাইক্রোবাসের কাছে ডেকে নিয়ে আসে। কাছে আসলেই ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে ফেলে। ভেতরে আগে থেকেই ৪/৫ জন ছিল। এরপর দ্রুত মাইক্রোবাস নিয়ে সাভার ও টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা সেতুর কাছে আসে। পথে কামাল হোসেন চঞ্চলের পা টেপ দিয়ে বেঁধে ফেলে। মুখে গামছা গুজে দেয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। চঞ্চল শক্তি প্রদর্শন করতে গেলে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়। এ অবস্থায় যখন দেখে তার নি:শ্বাস চলছে না, তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় কোন স্থানে ফেলে দেবে। এভাবে যমুনা সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নিঝুরি এলাকায় এসে কামাল হোসেন চঞ্চলের মরদেহ সেতুর নিচে ফেলে দিয়ে কুড়িগ্রামের দিকে চলে যায়।
পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আসাদুজ্জামান রঞ্জু বাদী হয়ে দোকান কর্মচারি রবিউলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পিবিআই এসপি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই পিবিআই জেলা টিম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নিহতের পরিচয় সনাক্ত করে থানা পুলিশকে অবগত করে। এরপর পিবিআই একটি টিম গঠন করে ছায়া তদন্ত শুরু করে। পিবিআই পরিদর্শক নজরুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে তথ্যে প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা হয়। এরপর গত রোববার ( ৯ মার্চ) কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গমারী থানার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ওই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সোমবার (১০ মার্চ) আদালতে জবানবন্দী দেয়।
তিনি বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত বাকী আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব নুরুল হক নয়ন
✆ ০৯৬৩৮-৯০৭৬৩৬। ই মেইল: thedailydrishyapat@gmail.com
।
Copyright 2025 Pratidinerdrishyapat