দৃশ্যপট প্রতিবেদক
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আমান ফিড ও সিমেন্ট কোম্পানির শ্রমিকদের ফ্যাক্টরীতে প্রবেশে বাধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে ওই। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে চরমভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। এদিকে এ বিষয়ে গত ২৮ এপ্রিল কোম্পানির জ্যৈষ্ঠ উপ-মহা ব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বাদী হয়ে উল্লাপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডি ও কোম্পানী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আমান ফুড ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরীটি সুনামের সাথে মৎস্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে প্রতিদিন এখান থেকে ৫শ থেকে ৬শ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়। গত ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে লেবার সরবরাহ করে আসছিল সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের আশীর্বাদপুষ্ট ওয়াহেদুল আলম খান লিমন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে শফিকুল ইসলাম শফি এমপি হন। এরপর তার সমর্থিতরাই আমান ফুড এন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে লেবার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চান। গত ৩১ মার্চ ওয়াহেদুল আলম খান লিমনের পরিবর্তে বর্তমান এমপির সমর্থক মইদুলকে লেবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য কোম্পানীর ডিডজিএমকে ফোন করেন এমপির পিএস রিয়াজুল ইসলাম। লিমনকে নিষেধ করে দেওয়া হয়। এর পরদিন ১ এপ্রিল লিমন নিজেও কারখানায় প্রবেশ করেনি এবং লেবারদেরকে ঢুকতে দেয়নি। ওইদিন এক শিফটে সম্পূর্ণ প্রডাকশন ও ডেলিভারী বন্ধ থাকায় কোম্পানীর ১৫/২০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে মঈদুল লেবার ভাড়া করে আনে। এতেও পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারে না কোম্পানি। এভাবেই স্বনামধন্য এই কোম্পানি ক্ষতিগ্রসস্থ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ওয়াহেদুল আলম খান লিমন শ্রমিকদের নগদ টাকা দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কারখানায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে কোম্পানীর ডিজিএম এইচ এম সালাউদ্দিন থানায় জিডি করেন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ওয়াহেদুল আলম খান লিমন ও তার সহযোগী মুসলেম, সিরাজ এবং তোফাজ্জল প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিপনন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নগদ অর্থ প্রদান, ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ফ্যাক্টরীতে প্রবেশে বাধা প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়াও অফিসে কর্মরত কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে।
কোম্পানিটির জ্যৈষ্ঠ উপ মহা ব্যবস্থাপক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, গত ১৪ এপ্রিল থেকে কিছু শ্রমিকদের কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মঈদুল কিছু শ্রমিক বাইরে থেকে সরবরাহ করলেও তারা নতুন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এতে ফ্যাক্টরীর উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে এবং কোম্পানী বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি মৎস্য ও পশুখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং উৎপাদিত পণ্যের সাথেমৎস্য ও পশু সম্পদের উৎপাদন প্রক্রিয়া সরাসরিভাবে জড়িত সেহেতু ফিড উৎপাদন ক্রমাগত ব্যহত/বন্ধ থাকলেউক্ত প্রক্রিয়াতে মারাতœক প্রভাব ফেলবে এবং মৎস্য ও প্রাণিজ খাদ্যের চাহিদায় ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে, যা আপামর জনসাধারণের জীবনযাত্রায়ও ব্যাঘাত ঘটাবে। তাছাড়া অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের উপার্জনেও বিঘœ সৃষ্টি হবে এবং জীবিকা নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে এবং এর দীর্ঘসূত্রতায়প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হবার ঝুঁকিতে থাকবে।
তবে কারখানায় শ্রমিক ঢুকতে বাঁধা দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ওয়াহেদুল আলম খান লিমন বলেন, ডিজিএম সাহেব তার পছন্দের লোককে দিয়ে শ্রমিক সরবরাহ করছেন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, আমান সিমেন্টের পক্ষ থেকে থানায় একটা জিডি করা হয়েছে। এটি আমরা আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত করা হবে।