সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
আর মাত্র তিন দিন পর ২১ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে নামতে পরেননি প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর ও মো. ওয়াহিদুজ্জামান। নির্বাচনি ব্যানার-পোস্টারেরও দেখা মিলছে না কোথাও। শেষ সময় প্রচার-প্রচারণা চালানোর কথা থাকলেও তারা ব্যস্ত রয়েছেন একে অপরের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট-রিভিউ আবেদন করা নিয়ে। ফলে সালথায় নির্বাচনি আমেজ নেই বললেই চলে।
এদিকে চায়ের দোকানেও জমছে না নির্বাচনি আলোচনা। প্রধান দুই প্রার্থীর দেখা না পেয়ে হতাশ সাধারণ ভোটাররাও। তারা তাকিয়ে আছেন ঢাকার উচ্চ আদালতের দিকে। সব সময় খবর রাখছেন কে কখন কি রায় পায়, তা শোনার জন্য।
তবে পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গেলেও তাতে নির্বাচনের মাঠ গরম হচ্ছে না। এমন অবস্থায় সঠিক সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর এবারও নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান। কিন্তু নিজ স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকায় গত ২৩ এপ্রিল যাচাই-বাছাই শেষে ওয়াদুদ মাতুব্বরের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করেও তার মনোনয়নপত্র ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে একক প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ না দিয়ে গত ২ মে ওয়াহিদুজ্জামানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটানিং কর্মকর্তা।
অন্যদিকে মনোনয়ন ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ওয়াদুদ মাতুব্বর। ওই রিট আবেদন গ্রহণ করে গত ১৩ মে বিকাল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারক এম এনায়েতুর রহিম ওয়াদুদ মাতুব্বরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। এরপর বুধবার (১৫ মে) বিকালে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ওয়াদুদকে দেওয়া হয়েছে আনারস প্রতীক আর ওয়াহিদুজ্জামান পেয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীক। নানা আইনি জটিলতার কারণে দেরিতে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ায় তারা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পান মাত্র পাঁচ দিন। এর ফলে পাঁচ দিনের জন্য তাদের দুই জনকেই ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামার কথা ছিল। কিন্তু ওয়াদুদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন ওয়াহিদুজ্জামান। ওই রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে আগামী রবিবার (১৯ মে) শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। রিভিউ আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ রায়হান।
আবুল হোসেন নামে সালথার এক ভ্যানচালক ও হারুন শেখ নামে এক কৃষক বলেন, গত নির্বাচনে প্রার্থীদের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারিনি। হাট-বাজার যেখানে গেছি, কোনো না কোনো প্রার্থীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। কেউ ভোট চেয়েছে কেউ বা চা খাওয়ার জন্য বলেছে। আমাদের আদরের শেষ ছিল না। কিন্তু এবার মাত্র দুই জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাও এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে এলাকায় দেখিনি। কেউ এসে বললো না, আমাকে ভোট দিয়েন বা দোয়া কইরেন। শুনেছি, তারা ঢাকায় আদালতে দৌড়াদৌড়ি করছে। যে কারণে নির্বাচনের প্রতি আমাদের আগ্রহ কম। চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন ও আদালতে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে নাজেহাল করছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।তিনি একজন মামলাবাজ লোক। এটা এলাকার সবাই জানেন। যে কারণে আমাকে ঢাকায় পড়ে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে সে আবার রিভিউ আবেদন করেছেন। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন। তাই সে আমাকে হয়রানি করে বিজয়ী হতে চাচ্ছে।
অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর একক প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান ওয়াদুদ। আমি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে রিভিউ আবেদন করেছি। আদালত গত ১৬ মে আংশিক শুনানি করে আগামী রবিবার পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আমি আদালতের শুনানির অপেক্ষায় আছি। তাই আপাতত ভোটের মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছি না।
শুক্রবার (১৭ মে) সকালে রিটানিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়াসিন কবির বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে উভয় প্রার্থীর চাহিদা অনুযায়ী তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন যদি মহামান্য হাইকোর্ট নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেন, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। এখন পর্যন্ত আগামী ২১ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।