নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তাঁর সমর্থিত প্রার্থী মারুফ হোসেন সুনামের কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীদের হুমকি ও প্রচারণায় বাঁধার অভিযোগও উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের।
শনিবার (২৫ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে শাহাজাদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবে সোবহান শেখ সজল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম সরাসরি একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে তিনি শাজহজাদপুরে অবস্থান করছেন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সহযোগী সংগঠনের নেতোকর্মী এবং চেয়ারম্যান-মেম্বরদের বাসায় ডেকে এনে তার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন তিনি। সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আমার কর্মীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ১ ভোট ৫ ভোট যেটাই হোক ভাইস চেয়ারম্যান উনি ঘোষণা দিয়ে নেবেন। এমপি মহোদয়ের নিজস্ব ইউনিয়নে নাকি আমাদের এজেন্টদের থাকতে দেবে না। শাহজাদপুরে নির্বাচনী উৎসবমূখর পরিবেশটা নষ্ট করে দিয়েছেন এমপি সাহেব।
এর আগে গত ২৩ মে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবে সোবহান শেখ সজল। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম তার নিজ বাসভবনে প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়নের মেম্বর-চেয়ারম্যান ও দলীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সাধারণ জনগণকে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মারুফ হোসেন সুনামের (চশমা প্রতীক) পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। মাহবুবে সোবহান শেখ সজল অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, বাঁধা প্রদানের একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক সরকার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের শুরুতেই আমাকে মারধোর করা হয়। ৬ মে মনিরামপুর এলাকায় এমপির সমর্থক সাবেক মেয়র নজরুল ইসলামের ছেলে সবুজ ইসলাম আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। এমপি চয়ন ইসলামের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এখানে এমপির প্রার্থী রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে খুনেরও হুমকি দেন। তার কথার প্রতিবাদ জানালে উত্তেজিত হয়ে আমাকে এলোপাথারি মারপিট করেন। এ বিষয়ে ৭ মে থানায় জিডি করা হয়েছে। ফারুক সরকার আরও বলেন, আমার পোস্টার কোথাও লাগাতে দেওয়া হচ্ছে না। যেখানেই পোস্টার লাগানো হয় দড়ি কেটে দেওয়া হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, আমি কারও পক্ষেই কোন কিছু বলছি না, কারও পক্ষেই কাজ করছি না। কেউ যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে সেটা সঠিক নয়।দলের নেতাকর্মীদের বাসায় ডেকে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে সবসময় কাউকে না কাউকে ডাকতে হয়, সাবধান করতে হয়। নির্বাচন চলছে, কোন অবস্থাতেই যাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে কথা বলতে হয়।
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আমি গত পরশুদিন এসেছি, আমার অফিসিয়াল কাজ ছিল, আজকে রাতেই চলে যাবো।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক সরকারের অভিযোগটি আমরা তদন্ত করে আদালতে প্রসিকিউশন দিয়েছি।শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবে সোবহান শেখ সজলের করা অভিযোগটি পেয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগকারী কোন প্রমাণ সংযুক্ত করেন নাই। তারপরও অভিযোগের বিষয়টি এমপি মহোদয়কে বললে তিনি অস্বীকার করেছেন। আমরা মৌখিকভাবে তাঁকে সতর্ক করেছি। বাকী অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য থানার ওসি সাহেবকে বলা হয়েছে।