নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য-সচিবের বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভূতভাবে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ককে অব্যাহতি দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। জেলা বিএনপির ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তারা অযৌক্তিকভাবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে মোসারব হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির ব্যানারে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রুকুনুজ্জামান খান রুকু ও সিনিয়ন যুগ্ম আহবায়ক আতিকুজ্জামান জাপান। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সদ্য ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব পাওয়া মোসারব হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন তারা।
উল্লেখ্য, সাংগঠনিক নিয়ম ভঙ্গ করা এবং জেলা বিএনপির নির্দেশ অমান্য করায় গত ৮জুলাই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাণীনগর থানা বিএনপির আহবায়ক রুকুনুজ্জামান খান রুকুকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং একই সাথে যুগ্ন আহবায়ক মোসারব হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে একই কারণে সিনিয়ন যুগ্ম আহবায়ক আতিকুজ্জামান জাপানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর এই কারণে তাদের এই সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রুকুনুজ্জামান খান রুকু জানান, আমরা রাণীনগর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও আহবায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ মিলে উপজেলার ৭২টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডসহ ৮টি ইউনিয়ন বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি চলতি বছরের ২৭ জুন অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে চারটি ইউনিয়নের কমিটি বহাল রেখে বাকি চারটি ইউনিয়ন কমিটি বিধি ও গঠনতন্ত্র বর্হিভূতভাবে বাতিল করে দেন জেলা বিএনপি আহবায়ক ও সদস্য-সচিব। কারণ জেলা বিএনপির ওই দুই নেতার পছন্দের লোক না থাকায় প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে ওই চারটি কমিটি বাতিল করে। শুধু তাই নয়, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্যদের উপেক্ষা করে উল্লেখিত কমিটি পূর্ণ গঠন করেন তারা। যেখানে বিএনপির রাজনৈকি পরীক্ষিত মেধাবী, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ রেখে অযোগ্য ও আওয়ামী লীগের ডামী নির্বাচনে সহায়তাকারী ব্যক্তিদের পদ পদবী প্রদান করেছেন। যা দলের জন্য আগামী আন্দোলন সংগ্রামকে দুর্বল করবে। সুতরাং এই নিয়ম বহির্ভূত কমিটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা প্রত্যাখান করছি। সেইসাথে আওয়ামী লীগের চড় ও আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী অবৈধ ও নিয়ম বির্হভূত ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া মোসারব হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষাণা করছি।
এ সময় নিয়ম বর্হিভূতভাবে তৈরি করা ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক বাতিল করে পূর্বের কমিটি বহাল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন রুকুনুজ্জামান খান রুকু ও আতিকুজ্জামান জাপানসহ সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিতিরা।
সংবাদ সম্মেলনের সময় উপস্থিত ছিলেন, সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আতিকুজ্জামান জাপান, আহবায়ক কমিটির সদস্য মেজবাউল হক লিটন, শহিদুল ইসলাম সুইট, মাহমুদুল হাসান মধু, আব্দুস ছাত্তার, মঞ্জু, উপজেলা সৈনিকদলের সভাপতি মো. পাভেল রহমান, সদর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক গোলাম হোসেন, ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ইউসুফ খানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অবাঞ্চিত ঘোষণা করার বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হিসেবে দাবি করে মোসারব হোসন মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, তারা তো অব্যাহতিপ্রাপ্ত, কাজেই তারা কিভাবে আমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন, প্রশ্নের সুরে বলেন তিনি। দলের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার লক্ষে আহবায়ক কমিটির হাতে গোনা দুই-চারজনকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তারা সংবাদ সম্মেলন করেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যারা দলের কোন পদেই নেই, তাদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ আছে। জেলা কমিটি সেটা অবগত আছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ বলেন, রুকু ও জাপানের বিরুদ্ধে রাণীনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত কমিটির প্রতিনিধিগণ তাদের ইউনিয়ন কমিটি গঠনে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সকল অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের দুইজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোসারবকে থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে রুকু ও জাপানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে দাবি করে নওগাঁ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সাংগঠনিক নিময় অনুযায়ী তাদের দুইজনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা যে সকল অভিযোগ তুলেছেন তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সবচেয়ে বড় বিষয় তারা আহবায়ক কমিটির মাত্র ৩-৪ জনকে নিয়ে সংবাদ সন্মেলন করেছে। কাজেই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিল না, তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। কারণ তারা দুজনে অব্যাহতি প্রাপ্ত।