নওগাঁ প্রতিনিধি: কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশ উত্তাল। সেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে চলছে হামলা, পাল্টা হামলা। নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনাও আছে। “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার, আমরা নই রাজাকার, চাই আমরা অধিকার” এই ধরণের শ্লোগান লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সারাদেশের মতো নওগায়ঁ শুরু হয়েছে কোটা সংস্কারের পক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। কোটা সংস্কারের দাবিতে ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শহরে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জেলার রাণীনগরে কোটা সংস্কারের পক্ষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে মোড়ে মোড়ে থানা পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে তারা। বৃহষ্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শহরের হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহরের গোস্তহাটির মোড় হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ। এ হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আহত হয়েছে বলে জানান কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা সকলে মেধার মূল্যায়ন চাই। এই মেধার মূল্যয়ন চাইতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের ভাইবোনদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের ছেলেরা এবং অনেক জায়গায় বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের হামলার কারণে আহত হয়ে অনেক ভাই মৃত্যু বরণ করেছে। আমরা আর কোনো ভাই বোনদের হারাতে চাই না। সেই কারণে সারাদেশে চলমান নায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও রাস্তায় নেমেছি। প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের এই আনদোলন মেধার মূল্যায়নের জন্য আন্দোলন। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত কোটা সংস্কার করা হোক। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম জানান, কোটা প্রথা সংস্কার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী হাট-নওগাঁ স্কুল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগ তাদের ওপর চড়াও হয়। এতে অন্তত ১০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে নওগাঁ জেলা পুলিশ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যাপক সতর্ক অবস্থানে ছিল। বুজানোর চেষ্টা করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে যান জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু ও সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ। এ সময় তাদের সাথে নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিনুল হক বেলাল, শফিউল আজম (ভিপি) রানা, যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদ হায়দার টিপুসহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নেন। এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য যানবাহন ভাড়া করে রাজশাহী মেডিকেল কজেল হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন বলে কালবেলাকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ন্যায্য একটা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। সেই শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ হামলা করছে। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নওগাঁয় আজকে যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বর্বরোচিত। তাদের হামলায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের মধ্যে দুজন অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে বিএনপি রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান সিউল মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নামে বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁয় কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক জোনায়েদের নেতৃত্বে ছাত্রদল অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। তাদেরই পরিচিত কিছু শিক্ষার্থীদের নাম মাত্র সামনে রেখে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিল তারা। তাদের সকলের হাতে ছিল লাঠিসহ বিভিন্ন কিছু। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের দলীয় পার্টি অফিসে হামলা করার পাঁয়তারা করছিল। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে গিয়ে সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করি। এমন সময় উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রথমে জোনায়েদের নেতৃত্বে ছাত্রদল আমাদের উপর হামলা করে। পরে আমরা আত্মরক্ষার্থে তাদের হাতে থাকা লাঠি কেড়ে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। তবে সকালে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ৫ জন শিক্ষার্থী গিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। আর বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বিকেল ৫টার দিকে মুঠোফোনে কালবেলা নিশ্চিত করেছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফজলুল হক নয়ন । অপরদিকে, এদিন জেলার রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের প্রায় দুইশত শিক্ষার্থ কোটা সংস্কারের পক্ষে শের-এ বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সড়কে উঠলে পুলিশ প্রথমে তাদের বাধা প্রদান করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে বাজারের বিজয়ের মোড়ে অবস্থান নেয় এবং বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার ও আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও নিহত শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবি জানান। এরপর অবস্থান কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীরা উপজেলা গোলচত্বরের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে লাগলে রাণীনগর থানা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা যাওয়ার চেষ্টা করলে আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে শিক্ষার্থীরা রেলওয়ে স্টেশনে মিছিল নিয়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের কোটা সংস্কার এ আন্দোলন পুলিশ মোড়ে মোড়ে বাধা দিয়েছে। তারপরেও আমরা দাবি আদায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশের বাঁধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর থানার ওসি মো. আবু ওবায়েদ কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নওগাঁ শহরে আবারও সেই আগের জায়গা হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। খন্ড খন্ড ভাবে শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সদর থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।