নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিরাজগঞ্জে বেলকুচি মডেল কলেজে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বকভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।এছাড়াও উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদের চেয়ার অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে প্রভাষক আল-মামুনের বিরুদ্ধে।বিধির বাইরে পৃথক দুটি ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তথ্যঅনুসন্ধানে জানাগেছে, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মান্নান সরকার এর চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ায় চাকুরীর শর্তাবলী রেজুলেশন অনুযায়ী বৈধভাবে মোঃ শামীম হোসেন কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উৎপ্রেক্ষিতে, গত ০৩/০৩/২০২৪ ইং তারিখে আনুমানিক দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটের দিকে অভিযুক্ত প্রভাষক আল মামুন ও অত্র কলেজের সভাপতি মোঃ হাফিজুর রহমান সহ মোট ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে বেআইনিভাবে কলেজে প্রবেশ করে শামীম হোসেন কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের চেয়ার থেকে বেআইনিভাবে সরিয়ে দিয়ে চাকুরীর শর্তাবলী বৈধ রেজুলেশন ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বেলকুচি আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের পিএস মোঃ সেলিম এর দাপটে দীর্ঘদিন ধরে জোরপূর্বকভাবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে আল মামুন দায়িত্বরত থাকলেও সেই বিষয়ে অবগত নেই গভর্নিং বডির গুরত্বপূর্ণ মোট ৮ সদস্য। রেজুলেশনে অত্র কলেজের পরিচালনা পর্ষদের মোট ১৩ জন সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৫ জনের সাক্ষর রয়েছে কিন্তু কোন ধরনের মিটিং না করে অত্র কলেজের সভাপতি সদস্যদের বাড়ি গিয়ে এবং ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে এসে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সাক্ষর করিয়েছেন। বাকী ৮ জন রেজুলেশনে স্বাক্ষর করে নাই। উক্ত রেজুলেশনে কোন ফোরাম হয় নাই। যাহা সম্পুর্ন অবৈধ ও বেআইনি। এমনকি রেজুলেশন বই কলেজেরও না। যা বাইরের একটা বই ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানাগেছে। এছাড়াও কলেজের সভাপতি এবং অধ্যক্ষ পদে মহামান্য হাইকোর্টে পৃথক দুইটি রিট পিটিশন মামলা চলমান থাকার কারনে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ কার্যক্রম হাইকোর্ট তর্কিত আদেশটি ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হলেও আদেশ অমান্য করে দৈনিক বাংলা বাজার,দৈনিক যমুনা প্রবাহ ও ডেইলি সান পত্রিকায় গত ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ, পদত্যাগ না করেই দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় গত ১২ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে রোজ শুক্রবারে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ এর দিন ধার্য করেন, যাহা সম্পুর্ন নীতিমালার বাইরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রী কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নিতে হলে পূর্বে তার বিষয় অধিভুক্ত হতে হবে। কিন্তু ২৭ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখে আল মামুন এর ইসলামের ইতিহাস বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অধিভুক্ত হয়। কিন্তু আল মামুন এর গায়ের জোরে বিষয়টি অধিভুক্ত হওয়ার গত ০৩ মার্চ ২০২৪ সালের ২৪ দিন আগেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। বিধির বাইরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ দখলের কারণে জনমনে উঠেছে নানানরকম প্রশ্ন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ গ্রহণের পর কলেজের ৬ টি বৈদ্যুতিক পাখা,ইলেকট্রিক বাল্ব ও নব নির্মিত ৪ তলা ভবনের রড চুরি হওয়ার পর, সেই চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের প্রচেষ্টা বা থানায় সাধারণ ডায়েরি না করে, চুরি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে এবং কলেজের বিএম শাখা এমপিওভুক্তি করার জন্য ২ শিক্ষকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।ঘুষ দাবি উপযুক্ত প্রমানিত হওয়ায় আল মামুন কে সহকারী অধ্যাপক চাকুরী থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বেলকুচি মডেল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি সহ মোট ১৩ জন সদস্যদের মধ্যে ৮ জন সদস্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন,আমরা বেলকুচি মডেল কলেজের পর্ষদের সভাপতি মোঃ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ০১/০৩/২০২৪ ইং তারিখে অত্র কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আল মামুন কে অবৈধ ও বেআইনি ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া এবং গত ০৫/০৩/২০২৪ ইং তারিখে অত্র প্রতিষ্ঠানের ৪ টি ব্যাংক হিসাবের অপারেটর পরিবর্তন সংক্রান্ত রেজুলেশন সহ কোন রেজুলেশন সাক্ষর করি নাই। উক্ত রেজুলেশন এ সাক্ষর থাকলেও তাহা ভুয়া বা সাক্ষর জাল করা হয়েছে। ২০ লাখ টাকার ঘুষ দাবীর বিষয়ে আল মামুন এর বিরুদ্ধে অত্র কলেজের বিএম শাখার প্রভাষক ও এস এম আব্দুল লতিফ ও অত্র কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল বাতেন এর নিকট তার ছোট ভাই বিএম শাখার প্রভাষক মোঃ খায়রুল বাসার বলেন,বিএম শাখার এমপিওভুক্তি করেনর জন্য জন প্রতি ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।এরপর আরও বলেন, টাকা না দিলে এমপিও বাতিল করে দেওয়ার ভয় দেখান আল মামুন।অভিযুক্ত আল মামুন এর বিরুদ্ধে এর আগেও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় উল্লেখিত অপরাধের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন, অত্র কলেজের শিক্ষার্থী এবং গভর্নিং বডির সদস্য ও কলেজের সকল শিক্ষক/কর্মচারীবৃন্দ। বেলকুচি মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান,অভিযুক্ত আল মামুন স্যারের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছি।তারপরও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা নেন নাই। বেলকুচি মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠা ও সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান সরকার জানান,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ সম্পুর্ন অবৈধ ও বেআইনি ভাবে দখল করে আছেন প্রভাষক আল মামুন। তার বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত যেগুলো অভিযোগ উঠেছে সবগুলো সত্য। আমি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বলতে চাই,তিনি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে দায়িত্বে থাকায় শিক্ষার মান,কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।দুর্নীতিবাজ দ্বারা কোন উন্নয়ন আশা করা যায় না।ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হোক। কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা জানান, আমি সভাপতি পদে দায়িত্বপালন কালে, কলেজ কর্তৃপক্ষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী মোঃ শামীম হোসেন কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রভাষক আল মামুন অবৈধভাবে জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বেলকুচি মডেল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন,হাইকোর্টের মামলা সম্ভবত নিষ্পত্তি হয়েছে,তবে এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলতে পারবে।গত ১২ জুলাই যে নিয়োগ কার্যক্রমের দিন ধার্য করা হয়েছিল সে বিষয়ে আমি শুনছিলাম। আরও কিছু জানার থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিকট শোনেন। বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া সুলতানা বলেন, কলেজের সভাপতি এবং অধ্যক্ষ পদে মহামান্য হাইকোর্টে পৃথক দুইটি রিট পিটিশন মামলার বিষয়ে আমি অবগত নয়। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ কার্যক্রম বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করে নাই। বেলকুচি মডেল কলেজের অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আল-মামুন উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নীতিমালা অনুযায়ী কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেছি।আমি রেজুলেশন বই নীতিমালা অনুযায়ী করেছি। আমি বৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছি।রেজুলেশন গভর্নিং বডির সদস্যদের সাক্ষর বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অফিস রুম বের করে দেন।