নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর মহাদেবপুরে পাঁচ মাস পূর্বে রিপন নামের এক যুবক গ্যাস ট্যবলেট সেবন করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অভিযোগ তোলা হয় নিহত রিপনের সনাতন ধর্মবলম্বীর এক গৃহবধুর সাথে সম্পর্ক ছিল। তাই পরকীয়ার অভিযোগে প্রেমিক রং মিস্ত্রি রিপন গ্যাস ট্যাবলেট সেবনে মারা যায়। তার মারা যাওয়ার পাঁচ মাস পর সনাতন ধর্মের ওই গৃহবধুর পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে নিহত রিপনের বাবা ওবায়দুল এর বিরুদ্ধে। উপজেলার ৬নং এনায়েতপুর ইউনিয়নের কালুশহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী গৃহবধুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করতে যায়। এরপর গত ৯ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেলে আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিতরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি সমাধান করতে স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে দায়িত্ব দেয়া হয় বলে জানা যায়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানাযায়, এনায়েতপুর ইউনিয়নের চকসত্তার গ্রামের যুবক রং মিস্ত্রি মো: রিপন পাশের গ্রামে গৃহবধুর বাড়িতে প্রায় দেড় বছর আগে রংয়ের কাজ করেন। এসময় এক সন্তানের জননি গৃহবধুর ওপর কূ-দৃষ্টি পড়ে রিপনের। বিষয়টি বুঝতে পেরে গৃহবধু এড়িয়ে যান। রংয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর রিপন কৌশলে গৃহবধুর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেন। পরে ফোনে বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত এবং জোরপূর্বক সম্পর্ক তৈরী করার চেষ্টা করে। বিষয়টি গৃহবধু তার স্বামীকে জানালে রিপনকে সাবধান করাসহ ফোন দিতে নিষেধ করা হয়। এভাবেই বেশ কিছুদিন রিপন যোগাযোগ করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। গৃহবধুর পক্ষ থেকে কোন সুবিধা করতে না পারায় রিপন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়।
চলতি বছরের মার্চ মাসে রিপন পারিবারিক কারণে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পুলিশ ময়নাতদন্তের পর মানসিক ভারসাম্যহীন বলে রিপোর্ট প্রদান করেন। লাশ দাফনের বেশ কিছুদিন পর সেখানকার স্থানীয় কিছু লোকজন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে। তারা মনে করেন ওই গৃহবধুর সাথে সম্পর্ক ছিল। এই ঘটনাকে পুঁজি করে তারা গৃহবধুর পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়ার পাঁয়তারা করে।
পরে গ্রামের বেশ কয়েকজন মিলে গৃহবধুর বাড়িতে যায় এবং তাদের কাছে উভয়ের নোংরা ভিডিও এবং ভয়েস রেকর্ড আছে বলে এই মর্মে গৃহবধুর পরিবারের কাছে মৃত্যুপন দাবি করে এবং টাকা না দিলে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াই ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। প্রাণের ভয়ে ভুক্তভোগী পরিবার টাকা দিতে রাজী হলে সুবিধাভোগীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরদিন সকালে বিষয়টি গৃহবধুর বাবার পরিবারে জানালে মেয়ের ভাই গ্রামে আসে। তাদের কাছে ভিডিও ডকুমেন্ট চাইলে তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়। এদিকে সরকার পতনের পর থানা পুলিশের কর্মবিরতি চলছিল। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষ হয়ে কিছু লোক সরকার পতনের পর তাদের ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে সমাজে অশান্তির চেষ্টা করছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধুর স্বামী বলেন, বাড়ির কিছু রংয়ের কাজ করার জন্য রং মিস্ত্রি রিপনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিন দিন কাজ করে। কাজের সুবাদে উল্টো বউয়ের সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। কাজ শেষে রিপন তার বাড়ি গেলেও মোবাইলে বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করতো। তাকে সাবধান করার পর আর বউয়ের মোবাইলে ফোন দেয়না। ভাবলাম সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু রিপন কি কারণে আত্মহত্যা করেছে সে দায়তো আর আমাদের না। প্রশ্নের সুরে বলেন তিনি। সরকার পতনের পরদিন সকালে বাজারে চা খেতে গেলে রিপনের বাবা ওবায়দুল আমাকে দেখতে পেয়ে লাঠি দিয়ে স্বজোরে আঘাত করে। নিজেকে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করি এবং বাড়িতে ফিরে আসি। এখন পুনরায় ৫ মাস পর ২লাখ ৩০ হাজার টাকা লোক মারফত মৃত্যুপন দাবি করছে তার বাবা ওবায়দুল। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে তারা।
গৃহবধুর ভাই অনুকুল দেবনাথ বলেন, ঘটনাটি জানার পর তাদের কাছে ভিডিও ডকুমেন্ট দেখতে চেয়েছিলাম তারা দেখাতে পারেনি। বিষয়টি অযৌক্তিক মনে হয়েছে। আমার বোনের কারণে যদি ছেলে মারা যায়, তাহলে প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওবায়দুলকে বলেছিলাম। বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি হওয়ার কারণে তারা প্রশাসনিকভাবে এগুতে পারেনি। সম্পুর্ন ঘটনাটি ছিল বানোয়াট ও মিথ্যা।
নিহত রিপনের বাবা ওবায়দুল জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলিনি। আমার ছেলে মারা গেছে আমি নিজেই অসুস্থ।
এনায়েতপুর ইউনিয়নের ইউপি মেম্বার শাহজান জানান, পূর্বের কোন ঘটনা নিয়ে এরকম বিশৃঙ্খলা করার কোন সুযোগ নেই। মেয়ে যদি দোষি হয় প্রয়োজনে ছেলেপক্ষ আইনগতভাবে এগোবে। আর বিষয়টি সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ এসে আমাকে সমাধান করার দায়িত্ব দিয়েছে। আমি স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দিব।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন জানান, এমন কোন বিষয় জানা নেই। তবে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।