নওগাঁ প্রতিনিধি:
সোনালী আঁশ পাট। আর কোমর পানিতে নেমে সেই পাটের আঁশ ছাড়ানো ও ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উত্তরের শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কৃষকেরা। কৃষি প্রধান এ দেশে এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষে কৃষক দুরাবস্থার সম্মুখীন হলেও চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সোনালী আঁশের দিন ফিরে আসতে শুরু করেছে।
বর্তমানে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুঁটেছে হাঁসির ঝিলিক।
উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সময় মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিচ্ছে কৃষকেরা। চাষিরা পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া আঁশ ছাড়ানো এবং হাটে বাজারে তা বিক্রিসহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে নারী-পুরুষেরা একসাথে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছে। অনেক স্থানে কৃষক খরচ বাঁচাতে রিবোন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেও কৃষকরা তাতে আগ্রহ নয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ২৫৫ হেক্টর জমিতে পাটের লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাট চাষের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম থাকায় অনেক স্থানে চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলন হওয়া ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাটের মূল্য ৩২’শ টাকা মণ ও নিম্ন মানের পাটের মূল্য ২৯’শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষীদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলার বড়ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম, পাটও ভালো হয়েছে এবং অন্য বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না।
উপজেলার সাহেবগঞ্জ ব্লকের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, এবার আমি ২বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে পাটের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আগামি বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবো বলে মনে করছি।
উপজেলার সাহেবগঞ্জ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান জানান, এবার গত বছরের তুলনায় আমাদের এলাকায় পাটের আবাদ লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি, পাটের ফলন ও দাম অনেক বেশি। এলাকার কৃষকরা যাতে পাট যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এবং স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদন করতে পারে এ জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের নিকট গিয়ে পরামর্শ প্রদান করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাটের ফলন ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দামও অনেক বেশি। পাটের নায্য মূল্য পেলে চাষিদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।