উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় চার লেন মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ কালভার্টের মুখ বন্ধ করে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে আব্দুল্লাহেল কাফি নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাঁচলিয়া নামক স্থানে ওই কালভার্টের মুখটি সম্পূর্ণ বন্ধ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চার গ্রামের শতাধিক বিঘার ফসলি জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০টি পরিবার।
সম্প্রতি ভুক্তভোগী চাষিরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব থেকেই উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচলিয়া বাজারের পশ্চিমে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট ছিল। রংপুর-এলেঙ্গা চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় সেখানে বড় কালভার্ট স্থাপন করা হয়। এদিকে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই কালভার্টটির দক্ষিণে মাটি ভরাট করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহেল কাফী, তার দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও আল-আমিন। কালভার্টের দক্ষিণ পাশের সওজের বড় জলাধারটি মাটি দিয়ে ভরাট করে দখল করে নেন তারা।
ফলে পাঁচলিয়া, হাসানপুর, রানীনগর ও ধোপাকান্দি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মহাসড়কের উত্তর পাশের ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি শতাধিক বিঘা জমির চাষাবাদ ব্যহত হয়ে পড়েছে।
পাঁচলিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ, জামাল উদ্দিন, ফিরোজ, গোলাম মোস্তফা, জিল্লুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, আব্দুল মালেকসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরা ৫০-৬০ বছর ধরে এ অঞ্চলে চাষাবাদ করছি। এবার ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় আবাদ করতে পারছি না। কালভার্টের মুখ বন্ধ করায় রাস্তার উত্তর পাশের পানি দক্ষিণে যেতে পারছে না। ফলে চার গ্রামের ১০০ বিঘারও বেশি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচিলয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর, ওয়াসিম, ইয়ার আলী ও আব্দুল্লাসহ অন্তত ১০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহেল কাফির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার ভাই ফরিদুলও ফোন রিসিভ করেননি। তবে অপর ভাই আল-আমিন বলেন, কালভার্টের দক্ষিণে আমাদের একশো বিঘা জমি রয়েছে। সামনে সওজের জায়গা লিজের জন্য আবেদন করে তারপর সেখানে মাটি ভরাট করেছি।
কালভার্টের মুখ বন্ধ করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে কৈফিয়ত আমি আপনাকে কেন দেব।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আবু সাদ নিলয় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ডিস্টার্বে আছি। কালভার্টের মুখটা বন্ধ করার পর তাকে বার বার বলা স্বত্বেও খুলে দেননি। আমরা নিজেরা এস্কেবেটর দিয়ে মুখ কিছুটা খুলে দিলেও পরে আবারও বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইদের বারবার বলার পরও তারা কোনো কর্ণপাত করছেন না। এই মুহূর্তে হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ মাঠে না থাকায় পদক্ষেপ নিতে পারছি না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, আমাদের কোনো জায়গা এখন লিজ দিচ্ছি না। যদি সে জলাধার বন্ধ করে তার বিরুদ্ধে জলাধার আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষি অফিসার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।