শরিফুল আলম,ঈশ্বরগঞ্জ(ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি:
স্কুল মাঠের মাটি ভরাট করার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। গত সোমবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন ১৫ জনের স্বাক্ষর বিশিষ্ট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং এলাকাবাসী। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্কুল মাঠের মাটি ভরাট করার জন্য সরকার কর্তৃক ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে।স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাটি ও রাবিশ ফেলে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়ের ২১ নং চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. অলি উল্লাহ চঞ্চল মাস্টার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শশাংক চন্দ্র বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে যায়,’ বিদ্যালয়ের মাঠে ভরাট করা মাটির দেবে গেছে। দেবে যাওয়া মাটিতে জমেছে পানি।আর এতেই স্কুল মাঠে হয়েছে হাঁটু পরিমাণ কাদা। যেখানে শিক্ষার্থী ও এলাকার কিশোররা প্রায়শই পড়ে যাচ্ছেন।সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এলাকার শতাধিক মানুষ জড়ো হন স্কুল মাঠে। এলাকাবাসীর জমায়েত ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্কুল থেকে আগেই সটকে পড়েন প্রধান শিক্ষক শশাংক চন্দ্র বিশ্বাস। নাজমুল হুদা ও রনি হায়দারসহ অন্তত আরও ১০জন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, স্কুলের মাঠের পূর্বপাশে এবং স্কুলভবনের পিছনে কোন মাটি ফলা হয়নি। বরং সভাপতির বাড়ির পুকুরেও এই বরাদ্দের টাকা দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি পুরো টাকার কাজ না করিয়ে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে।
স্কুল কমিটির সহসভাপতি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সহসভাপতি রহিম উদ্দিন বলেন,’ স্কুলের মাটি ভরাটের বিষয়ে তারা কাউকে কিছু জানায়নি। আমাকেও কিছু জানায়নি, তারা নিজেদের মনগড়া কাজ করেছে। কাজ শেষ করে আমাদের স্বাক্ষর নিতে আসলে আমরা বরাদ্দকৃত টাকা ও কাজের হিসেব চাইলে তারা দেননি। তবে আমরা এখানে যারা মাটি ভরাটের কাজ করেছে তাদের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্নভাবে আমরা হিসেব করে দেখেছি ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার কাজ করা হয়েছে। বাকী টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটির আরও দুই সদস্য মো. গাজী রহমান ও আমিনুল ইসলাম বলেন,’স্কুলমাঠে মাটি ভরাটের বিষয়ে আমাদের অবগত না করেই নামমাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকার মাটি ভরাট করা হয়েছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত পুরো টাকা দিয়ে ভালোভাবে মাটি ভরাট করে বাকী টাকা স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করা হোক।এবিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার বেলা ২ টার দিকে ওই স্কুলে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শশাংক চন্দ্র বিশ্বাসকে পাওয়া যায়নি। পরে দুইদিনে প্রধান শিক্ষকের মোবাইলে অসংখ্য কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত স্কুল কমিটির সভাপতি মো. অলি উল্লাহ চঞ্চল মাস্টার মোবাইলে জানান,’ এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। কত টাকার কাজ করা হয়েছে, আর কত টাকা আছে তাও জানিনা। সবকিছু প্রধান শিক্ষক জানেন। আমি তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি বলেছেন,’সব টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে , কিছু টাকা বাকী আছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২২৪ অর্থ বছরে স্কুল মাঠের মাটি ভরাটের জন্য ১০ লাখ টাকার স্পেশাল বরাদ্দ পায় স্কুলটি। নিয়ম অনুযায়ী এই কাজগুলি স্কুল পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ টাকার কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নীলুফার হাকিম বলেন,’স্কুলের মাটি ভরাটের প্রকল্পের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকার কর্তৃক এতো টাকার বরাদ্দ দেওয়া হলো অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়নি,এটি উচিত হয়নি। আমাদের জানালে হয়তো আমরা তদারকি করতে পারতাম। তবে এবিষয়ে একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন,’ এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গঠন করা হবে।