সাব্বির মির্জা, তাড়াশ প্রতিবেদক:
চলনবিলে হাঁস পালনের সব থেকে বড় সুবিধা বিলে পানি থাকা অবধি প্রায় ছয় মাস হাঁসের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় শামুক, ঝিনুকসহ জলে বাস করা নানান প্রাণী। এতে হাঁস পালনে খরচ কমে। বাড়ে লাভের পরিমাণ। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বছরের পুরো সময় অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে এসব পরিবারের ছেলেরা। মূলত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই মিটছে সংসারের খরচপাতি। চলছে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা। কমছে ঋণের বোঝাও। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বা এ ধরনের খামার গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা স্থানীয়দের।
তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে চলনবিলে ছোট বড় প্রায় ২০০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে হাঁস পালনকারীরা পাতিহাঁস ও উভয় প্রকারের হাঁস পালন করে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে।
বিলে উচ্ছিষ্ট বোরো ধান ও শামুক হাঁসের প্রধান খাদ্য এবং অল্প টাকা বিনিয়োগে ব্যবসাসফল হওয়ায় বর্তমানে পুরুষরাই বিকল্প পেশা ও বেকারত্ব দূর করার জন্য অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছে।
সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে হাঁসের খামারগুলোতে দেখা যায়, সকাল হলেই খামারিরা হাঁস নিয়ে রওনা দেন বিলের পানিতে। সন্ধ্যার আগে আবার ফিরে আসে খামারে। কেউ আবার পানিতেই জালের ঘের করে হাঁসের খামার করেছেন।
চলনবিলের দিঘী সগুনা গ্রামের খামারি খয়বার হোসেন বলেন, তিনি ৫০০টি হাঁস পালন করেন। সকালে হাঁসগুলো বিলে চলে যায়। সারাদিন শামুক-ঝিনুক খায়। তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় করছেন তিনি।
চলনবিলের কামাড়শোন গ্রামের খামারি মিজাল আলী বলেন, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল জাতের ৩০০টি হাঁস রয়েছে। ৪-৫ মাস বয়সী হাঁস কেনেন। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। এখন তার খামারের ৩০০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ২-৩লাখ টাকা লাভ থাকে তার।
তিনি আরও বলেন, একটি হাঁস গড়ে বছরে ৩০০টি ডিম দেয়। তিন বছর পর ডিম দেওয়া কমতে থাকে। তখন মাংসের জন্য হাঁসগুলো বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতিটি ডিম ১১-১২ টাকা ও প্রতিটি
হাঁস গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের খামার শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সকাল ৭টায় হাঁস ছাড়ি। তারপর ডিমগুলো তুলা হয়। ৩০০-৩৫০টি ডিম হচ্ছে এখন।
তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা. মো :অলিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার প্রতিটি খামারেই অন্তত ২-৩ জন কাজ করছে। খামারগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার হাঁস পালন করা হচ্ছে। বিলে পানি বেশি থাকলে খরচ তেমন হয় না। পানি না থাকলে খরচ সামান্য বাড়ে। বছরে একেক খামারির কমপক্ষে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়।
তিনি আরও বলেন, তাড়াশ উপজেলার হাঁস পালন করছে আরও ১-২ হাজার পরিবার। সেখানেও প্রায় ২-৩ লাখ হাঁস আছে। প্রতিটি পরিবার বছরে আয় করছে ২০ হাজার টাকা করে।