শরিফুল আলম,ঈশ্বরগঞ্জ(ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হরহামেশাই হচ্ছে চুরি-ছিনতাই। চুরি-ছিনতাই উপজেলায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গেছে।
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক,নারী ও শিশু নির্যাতন এবং হত্যার মতো ঘটনা। রাত কিংবা ভোরের ঈশ্বরগঞ্জ যে নিরাপদ নয়,তা উপজেলার বাসিন্দারাও জানেন। সাধারণ বাসিন্দাদের পাশাপাশি সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ভোগান্তির শিকার হন অনেক সময়। ছিনতাইয়ে ছিনতাইকারী চক্র ব্যবহার করে ছুরি-চাকুর পাশাপাশি দেশী-বিদেশি নানান অস্ত্র। চুরি-ছিনতাইয়ে বাধা পেলে ছুরিকাঘাত করা হয় টার্গেট ব্যক্তিকে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই।
একদিকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসা-বাড়িতে পড়েছে মোটরসাইকেল,নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির হিড়িক। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প ও গরু চুরি, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ থানায় গত ২১ মাসে মোট ৪৮৮ টি মামলা রেকর্ড হয়েছে।এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে মাদক মামলা ৯৮টি,নারী ও শিশু আইনে ৫৭টি, চুরি ৩৩টি,হত্যা মামলা-১২ টি, দস্যুতা ৩টি,অস্ত্র মামলা ২ টি এবং অন্যান্য মামলা ২৮৩ টি।
গত তিন মাসে উপজেলার উচাখিলা ও রাজিবপুর ইউনিয়ন থেকেই চুরি হয়েছে দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প। চোর আতঙ্কে দিন কাটছে এসব এলাকার হাজার হাজার কৃষকদের। পৌরবাসীদের চোর আতঙ্কে কাটে দিন-রাত। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের বাসাবাড়ি থেকে যেকোনো তালা চোখের পলকেই ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। সেইসাথে বাসায় নগদ অর্থ স্বর্ণা-অলংকারও। উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়ের আবদুল্লাহ, মুরশেদুল মুন্সী,আবু সাঈদ ,মানিক মিয়াসহ প্রায় ২০ জন কৃষক জানান, গত তিন মাসে তাদের এলাকা থেকে ২ শতাধিক বৈদ্যুতিক সেচ মোটর চুরি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। যারা পুরনো মোটর ক্রয়-বিক্রয় করে তাদের সঙ্গে চোরদের সখ্য রয়েছে। পৌর এলাকার বাসিন্দা ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম বলেন, ‘ চলতি বছর আমার বাসার গেট ও রুমের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে চোরের দল। এসময় ওয়ারড্রবের ড্রয়ার এবং স্টিলের আলমারির তালা ভেঙে ৬ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করেছে চোর চত্রু। এখনও ওই ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার হয়নি।এমন ঘটনা প্রাইয় ঘটছে পৌর এলাকায়।গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের জাটিয়া ইউনিয়নের জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. আরমান মিয়ার (২৪)-কে ডিউটিরত অবস্থায় কুপিয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্বজনরা তাকে হাসপাতলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষাণা করে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এর আগে গত (২৬ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের গুইলাকান্দা গ্রামের স্কুল ছাত্র রাব্বি মিয়া অটোরিকশা বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন শুক্রবার ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকার বানার নদের সেতুর নিচ থেকে রাব্বির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, অটোরিকশা ছিনতাই করার পর তাকে হত্যা করে চক্র। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাব্বি মিয়া (১৩) পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশা চালিয়ে বাবার কাজে সাহায্য করত। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঈশ্বরগঞ্জ প্যানেলের সমন্বয়ক মোহাইমিনুল ইসলাম শিহাব বলেন,’ উপজেলায় মাদক-চুরি,নারী নির্যাতন-খুন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের নিরবতায় এসব অপরাধ আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখনই সময় এসব অপরাধ নির্মূলের।ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস কোরাইশী টিটু বলেন,’আমার বাসায় তিনবার চুরি হয়েছে।আরও কয়েকজন সাংবাদিকের বাসায় চুরি হয়েছে। আমার উচাখিলা ইউনিয়নে কয়েকমাস ধরে সেচ পাম্প চুরির হিড়িক পড়েছে। কোন ভাবেই থামছে না চুরি। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ হয়েছে যে,প্রতি রাতেই চুরি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুরি নিয়ন্ত্রণ ও চোর চক্র সনাক্তে আশানুরূপ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।সচেতন মহলের লোকজন বলছেন,ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের একটি অংশ অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য চুরি-ছিনতাইর মতো অপরাধে জড়ায়। তারা পেশাগত অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। জমি সংক্রান্ত বিরোধ,ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের জেরে খুন বেশি হয়ে হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের টহল বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিবিড় তদারকি করতে হবে। এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চুরি-ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধ নির্মূলে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক এগোচ্ছে থানা-পুলিশ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন চুরি মামলায় ৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।