নওগাঁ প্রতিনিধি:
শরতের হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজ পাতা। সেই সঙ্গে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। মাস খানেক পরেই সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। তারপর শূন্য গোলা ভরে উঠবে ধানে। কিন্তু হঠাৎ ধানের পাতা পোড়া রোগ ও মাজরা পোকার আক্রমণে হতাশ হয়ে পড়েছেন শষ্য ভান্ডার ও ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁর কৃষকরা। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চিন্তিত জেলার বদলগাছী উপজেলার কৃষকরা। আমন ধানে অনু খাদ্যের অভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ধানের পাতা হলুদ হয়ে পুড়ে শতশত বিঘা জমির ধান মরে যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অপরদিকে কৃষি বিভাগের সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
এদিকে এই এলাকার কৃষকদের আয়ের উৎস একমাত্র ধান। সেই ধানে পাতা পোড়া রোগ দেখা দেয়ায় কৃষকরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। প্রায় একদিন পর পর বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ ব্যবহার করেও সুফল পাচ্ছে না তারা। এতে তাদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বদলগাছী উপজেলায় ১৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। ধানের মধ্যে রয়েছে বিনা সেভেন, বিআর-৪৯, বিআর-৫১, বিআর-৫২, ব্রি ধান-৯০, স্বর্ণা-৫ ও আতব ধানসহ বিভিন্ন প্রজাতের। ১৫ দিন আগে হঠাৎ করে উপজেলার বদলগাছী সদর, গোড়শাহী, আইনাড়া, চাকরাইল, জাইজাতা, ছোট কাবলা, বড় কাবলা, গাবনা এলাকাসহ কয়েকটি গ্রামের শত শত বিঘা জমির ধান এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। পাতা হলুদ দেখা দেয়ার ৫ থেকে ৮ দিনের মধ্যে জমির সমস্ত ধান মরে যাচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন জমিতে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত ধানগুলো স্বর্ণা, বিআর-৪৯, ব্রি ধান-৯০ এবং আতব জাতের।
গোড়শাহী গ্রামের কৃষক মো শামীম হোসেন বলেন, প্রায় ৪ বিঘা জমির ধান পাতা পোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোন ওষুধ প্রয়োগ করেও ফল হচ্ছে না। অতিরিক্ত ঔষধ প্রয়োগ করায় গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। ধান পাওয়ার পর ভালো দাম না পাইলে মাথায় হাত ছাড়া উপায় থাকবে না।
আইনাড়া গ্রামের কৃষক হান্নান বলেন, প্রথমে ধানের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এরপর ৫-৭ দিনের মধ্যে সম্পন্ন আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৫ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের জমিতে যেসব ভালো ধান ছিল সেগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে। কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিলেও ওষুধ প্রয়োগ করে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমরা।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, খবর পেয়ে ঐ এলাকার প্রায় ১০-১২ জন কৃষকের আমন ধানের জমি পরিদর্শন করি। ব্রি ধান-৯০ ও স্বর্ণা-৫ জাতের আমন ধানের জমিতে ব্যাকটেরিয়াল লিফ বøাইট রোগের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে বিঘা প্রতি ২০০ গ্রাম এমওপি সার, ১০০ গ্রাম থিওভিট ও ১০০ গ্রাম জিংক সালফেট স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে সকল জমিতে আমন ধান দুধ অবস্থায় আছে, সে সকল জমিতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।