প্রতিদিনের দৃশ্যপট ডেস্ক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলমীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ পাশের দেশ থেকে লিখে এনে ট্রাইব্যুনালে বসিয়ে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিচারের জন্য হাইকোর্ট সুপ্রীম কোর্টে লাঠিয়াল বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে। এক বিচারপতি টকশো এসে আস্ফালন করে বলতো আজকে নিজামীর ফাঁসি দিলাম, আজকে মুজাহিদের ফাঁসি দিলাম। আজ সিলেটের বর্ডারে জঙ্গলের ভেতরে কলার পাতা গায়ে দিয়ে ছিলেন তিনি। পাবলিক তাকে গলায় গামছা বেঁধে ধরে এনেছে। এরা এত অন্যায় করেছে একেকজনের ১০বার ফাঁসি দিলেও তাদের শাস্তি কম হবে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আহবান জানাবো এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের আমলে যারা বিচার করেছেন, যারা শাস্তি দিয়েছেন, যারা সহযোগীতা করেছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়ে নিজামী সাহেব, মুজাহিদ সাহেবকে যারা ফাঁসি দিয়েছেন তাদের কারোরই ক্ষমা নেই এই বাংলার মাটিতে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন মুক্তির সোপান এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামীলীগের বর্বরোচিত লগি-বৈঠা হামলা নিহতদের স্মরণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ২৮ অক্টোবর ২০০৬ থেকে শুরু করে ৫ আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকান্ড হয়েছে খুনীদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি কার্যকর করার দাবী জানান তিনি।
মওলানা রফিকুল বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরই বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্বিচারে হত্যা করে। ইতিমধ্যে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে শেখ হাসিনাকে দায়ী করা শুরু করেছে। তাদের প্রথম টার্গেট ছিল সেনাবাহিনীকে দূর্বল করা। দ্বিতীয় টার্গেট ছিল ইসলামী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা। এ জন্য আমীর মওলানা নিজামীসহ জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে তামাশা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার নামও দেওয়া হয়েছিল। বয়স কম হওয়ায় পরে তারা বাদ দিয়েছে। এ তালিকা এসেছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। তারা মানুষ দেখে তালিকা করে নাই, তালিকা করেছে পদ দেখে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই মহিলা ভ্যাংচাইয়া ভ্যাংচাইয়া বলতো আমি পালাই না, শেখের বেটি পালায় না। কিন্ত ঠিকই পালিয়ে গেছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে জুলুম নির্যাতেনর শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি জামায়াত-শিবির। একটি দলের শীর্ষ স্থানীয় ১১ জন নেতাকে হয় ফাঁসি দিয়ে নয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১৮ বছরে ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, হাত কেটে দেওয়া হয়েছে। এই সিরাজগঞ্জেই ১৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরপরও জামায়াত শিবিরের কোন নেতা দেশ থেকে পালায় নাই।
জামায়াত ক্ষমতায় এলে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেলে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশে একজন সুন্দরী রমনী একাকী চলবে কোন দূর্বৃত্ত তার সতীত্ব হরণ করতে পারবে না। মহিলাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, ব্যাংক আলাদা থাকবে। মহিলারা তাদের ইজ্জত আব্রু নিয়ে রাস্তায় চলবে, চাকরী করবে, ব্যবসা করবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে কোন সংখ্যালঘু নেই। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান। একজন মুসলমান যে অধিকার পাবে, একজন অমুসলিম সেই অধিকার পাবেন। ইসলামী রাষ্ট্র হলে অমুসলিমদের ধন-মান-ইজ্জত আব্রু ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবে ইসলামী সরকার।
সিরাজগঞ্জ শহর জামায়াতের আমির মো. আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা’র আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শাহীনুর আলম।
শহর জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. মোস্তফা মাহমুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা জামায়াতে ইসলামী জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ আলী আলম, মাওলানা মো. আব্দুস ছালাম, সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. জাহিদুল ইসলাম, জেলা শাখার প্রচার শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি অ্যাডঃ মাসুদুর রহমান, জেলা শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাড. মো. ছাইদুল ইসলাম খান, বেলকুচি উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মো. আরিফুল ইসলাম সোহেল, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আলহাজ উদ্দিন প্রমূখ।