মাসুদ রানা,সিনিয়র রিপোর্টারঃ
১৯৯৩ সালে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে অস্ত্রের দ্বন্দ্বে যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন কোটা গ্রামের চাঞ্চল্যকর মতিয়ার রহমান তরফদার (৩০) হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সুদীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ দেশে-বিদেশে পলাতক চরমপন্থী মাস্টারমাইন্ড খুনী আক্তারুজ্জামান ডলার (৫৫)’কে ঢাকা মহানগরীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব-৩ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গত ২২ মার্চ ২০২৪ ইং রাত ২ ঘটিকার সময় ঢাকা মহানগরীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১৯৯৩ সালের যশোর জেলার অভয়নগর থানায় চরমপন্থী পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে অস্ত্রের দ্বন্দে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ দেশে-বিদেশে পলাতক প্রধান আসামি চরমপন্থী আক্তারুজ্জামান ডলার (৫৫)’কে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও মামলার সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিম মতিয়ার রহমান তরফদার ও গ্রেফতারকৃত আসামী আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার একই গ্রামের দুই পাড়ার বাসিন্দা ছিল। ডলার ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (সর্বহারা পার্টির) সক্রিয় সদস্য। ভিকটিম অভয়নগর এলাকার রাজঘাটে অবস্থিত কার্পেটিং জুট মিলস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানা এলাকার জনৈক তোযাম চেয়ারম্যানকে সর্বহারা পার্টির ডলার ও তার দোসররা হত্যা করে একটি বন্দুক ছিনিয়ে নেয়।
এই ছিনিয়ে নেওয়া বন্দুকটি আসামি আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার বস্তায় ভরে জনৈক ভ্যান চালক আসলামের ভ্যানে তেজপাতা আছে মর্মে এটি যশোরের নোয়াপাড়ায় নিয়ে যেতে বলে। ভ্যান চলার সময় মাঝে মাঝে ইটের ধাক্কায় খটখট আওয়াজ হওয়ায় ভ্যানচালক আসলাম পথিমধ্যে পায়রা বাজারে ভিকটিম মতিয়ার রহমানকে ঘটনাটি বলে। তখন সে বস্তা খুলে একটি বন্দুক পায় যার গায়ে কয়েকদিন আগে মৃত তোযাম চেয়ারম্যানের নাম সম্বলিত ছিল।
তখন তৎকালীন চেয়ারম্যান আমিন সাহেবের মধ্যস্থতায় বন্দুকটি পায়রা বাজারে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করে। এলাকায় এই মর্মে খবর প্রকাশ পায় মৃত তোযাম চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় ডলারসহ চরমপন্থী অন্য সদস্যরা জড়িত। এই ঘটনায় ডলার সহ তার চরমপন্থী দলের অন্য সদস্যরা ভিকটিমকে শায়েস্তা করার পায়তারা করতে থাকে। ১৯৯৩ সালের দশম রমজানের ৩ মার্চ ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ডলার সহ ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র চরমপন্থী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দল ভিকটিমের ছোট ভাইকে রাইস মিলে বেঁধে রেখে ভিকটিমের পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে।
ভিকটিমকে ঘরের বেড়া কেটে টেনে হেঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে বাড়ির সামনেই রাত ১০ টা নাগাদ মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি ২২ টি কোপ মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ভিকটিমের বাবার একটি বন্দুক ও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মূলত: চরমপন্থী দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় উক্ত ভিকটিম নিহত হয়। পরবর্তীতে আসামির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে যশোর জেলার অভয়নগর থানায় হত্যা মামলাটি রুজু হয়। মামলা রুজু হওয়ার পরপরই গ্রেফতারকৃত আসামি নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফেরারি জীবনযাপন করতে শুরু করে।
এক পর্যায়ে নিজের নাম ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে মাহমুদুল হাসান নামে নতুন নাম ধারণ করে ও নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত দক্ষিণ আফ্রিকায় আত্মগোপনে ছিলেন। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই অদ্যাবধি সে পলাতক ছিল। যেহেতু আসামি দীর্ঘদিন যাবত ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ছিল, আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার কার্য পরিচালনা শেষে আদালত উক্ত মামলায় দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে বিজ্ঞ আদালত ধৃত ডলারের বিরুদ্ধে উক্ত হত্যা মামলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত মর্মে রায় প্রদান করে। দুধর্ষ এই খুনী গত ২২ মার্চ ২০২৪ ইং ঢাকা মহানগরীর মানিকদী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব-৩ এর হাতে আটক হয়।ধৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।