নওগাঁ প্রতিনিধি:
প্রায় ছয় মাস পূর্বে জনি কুমার নামের এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল ফুলকীর (ছদ্ম নাম)। বিয়ের চার মাস পর জানতে পারে ফুলকী তিন মাসের অন্ত:সত্তা। বিষয়টি বাবা-মাকে জানালে গর্ভপাত ঘটান। জানতে পারে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ফলে হাতের মেহেদীর রং না মুছতেই হয়ে যায় বিবাহ বিচ্ছেদ। হতাশায় পড়ে মেয়ে ও মেয়ের পরিবার। ঘটনাটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে। মেয়ের অভিযোগ বিয়ের একমাস আগে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র নামের এক ছেলে বাড়িতে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করে। আর ছেলের পরিবারটি বিষয়টি মানতে নারাজ। এদিকে রেজাউল করিম পল্টন নামের এক চেয়ারম্যান এই ঘটনার বিচার করে দিয়েছেন।
জানা যায়, ছদ্ম নামের ফুলকীর বিবাহ বিচ্ছেদের প্রায় পাঁচমাস পরে উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের অখিল চন্দ্রের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রকে বিবাহের দাবীতে অনশন শুরু করেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবারের দিন দুপুরের দিকে মেয়ে ছেলের বাড়ীর মূল ফটকের সামনে বিষের বোতল নিয়ে হিন্দু ধর্ম মতে বিবাহ না করলে আত্মহত্যার হুমকি প্রদান করে ওই ছেলের বাড়ীতে বিবাহের দাবীতে অনশন করেন। অনশনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম বাসীর মধ্যে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। এতে টক অব দি ভিলেজে পরিণত হয় ঘটনাটি।
অপরদিকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া উঠে আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম পল্টন। অভিযোগ চেয়ারম্যান ছেলের পরিবার থেকে টাকা না পেয়ে, মেয়ের পরিবার থেকে টাকা নিয়ে একক ক্ষমতাবলে ইউনিয়ন পরিষদে বিচার করেছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলনা ছেলে। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি, ধামকি দিয়ে ছেলের বাবা অখিল ও তাঁর বড় ভাই সুর্ব্রত এর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করান। মেয়ে ফুলকীকে তাদের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক ও হিন্দু শাস্ত্রমতে হয়নি কোনো বিয়ে। তারপরও তিনি এমন কান্ডজ্ঞানহীন ঘটনা ঘটিয়েছেন শুধুমাত্র একক ক্ষমতাবলে। সাথে ছিল গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর। এমনটিই অভিযোগ ছেলের পরিবার ও একাধিক স্থানীয়দের।
ধর্ষণ ও অনশন এর বিষয়ে জানতে চাইলে ছদ্মনামের ফুলকি জানান, আমার সাথে মৃত্যুঞ্জয়ের কোনো দিন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না। তবে আমার বিবাহের পূর্বে আমি আমাদের বাড়ীতে একা ছিলাম, তখন মৃত্যুঞ্জয় আমাদের বাড়ীতে আসে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণ করেন। তিনি আরও জানান, আমাকে ধর্ষণের একমাস পরে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের তিনমাস পরে আমি জানতে পারি আমার গর্ভে চার মাসের বাচ্চা। পরে আমি শ্বশুর বাড়ী থেকে বাবার বাড়ীতে বেড়াতে আসি এবং গর্ভপাত ঘটাই। ঘটনাটি আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন জানতে পারেন। পরে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
এ বিষয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের কাছে জানতে চাইলে বড় ভাই সুব্রত বলেন, আমার ভাই নিরাপরাধ। ওই মেয়ের সাথে আমার ভাইয়ের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। চেয়ারম্যান এবং গ্রামের কিছু লোকজন জোর করে মারধরের হুমকি দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েটিকে আমাদের বাড়িতে রেখে গেছে। মেয়ের কিছু হলে সব দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে চেয়ারম্যান বলে গেছে। আপনার ভাইয়ের সাথে ওই মেয়ের বিয়ে হয়নি। তাহলে ওই মেয়েকে আশ্রয় দিলেন কেন জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বলেছে ওই মেয়ের কিছু হলে তোমাদের দায়ভার নিতে হবে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম (পল্টন) মুঠোফোনে বলেন, সাক্ষাতে কথা বলবো, বলে ফোন কেটে দেয়। আবারও ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বললামতো সাক্ষাতে কথা বলবো। আমি একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান জানান, এই ধরণের কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।