ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি:
‘আমার বুকের মানিক এখন কলিজা জুড়ানো ‘মা’ বলে আর ডাকতে পারে না, পা ফেলে হাঁটতেও পারে না। সারাদিন-রাত ব্যথার যন্ত্রণায় শুধু বোবা কান্না করে। মা হিসেবে সন্তানের এই কান্না আমি আর সইতে পারছি না। _কান্না জড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু সাইফের মা শেফালী বেগম। শিশু মো. সাইফ এর বয়স মাত্র ৬ বছর ৬ মাস। এই সময়ে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা আর ছোটাছুটিতে ব্যস্ত থাকার কথা ছিলো তার। কিন্তু বিরল রোগে আক্রান্ত সাইফ সর্বদাই ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পা ফেলে হাঁটতেও পারছে না সাইফ। বলতে পারছে না কোন কথা। গিলতে পারছে না ভারী কোন খাবারও। তীব্র ব্যথার যন্ত্রণায় শুধু কান্না করছে। তার কান্নায় মা শেফালী বেগমের মনেও নেই কোন শান্তি । অটোরিকশাচালক বাবা রুহুল আমীন তার সর্বস্ব শেষ করেছেন একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য। তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ থেকে১০ লাখ টাকা। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। দিনদিন আরও খারাপ হচ্ছে সাইফের শরীর। সাইফের পরিবার বলছে, চিকিৎসক জানিয়েছেন বাংলাদেশে তার কোন চিকিৎসা নেই। দ্রুত বিদেশে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে সুস্থ হয়ে উঠবে সাইফ। শিশুটির বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে। কিন্তু সাইফ বর্তমানে পার্শ্ববর্তী গুইলাকান্দা গ্রামে মায়ের সাথে তার নানার বাড়িতে বাড়ি আছে।অসুস্থ সাইফকে কেমন আছো জিজ্ঞেস করলে,’কথা বলতে না পেরে ঠোঁট ভেঙে শুধু বোবা কান্না করছিল সাইফ। কেঁদে কেঁদে হয়তো সে বলছিল- ইচ্ছে করলেও হাঁটতে পারি না, খেলতে পারি না। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি সুস্থ হতে চাই!মা শেফালী বেগম বলেন, ‘২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে আমি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। একদিন হঠাৎ সাইফের দুই চোখের ওপরের অংশ ফোলে যায়। তৎক্ষনাৎ ব্রাক্ষণবাড়িয়াসদর হাসপাতালে ভর্তি করাই। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সাইফের কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ছেলেকে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি। তারপর ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ভর্তি করি। পরে আরও বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে ঘুরে চিকিৎসা করিয়েও কোন ফল পাইনি। আস্তে আস্তে ছেলের শরীর শুকাতে থাকে। সাইফের হাত-পা গুলো শরীরের অন্য অঙ্গের তুলনায় চিকন হয়ে গেছে। আগে কথা বলতে পারতো, এখন কথাও বলতে পারে না। হাঁটতেও পারে না। এখন আমাদের সব সহায়সম্বল শেষ। কীভাবে ছেলের চিকিৎসা করাবো বুঝতে পারছি না। সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা বিত্তশালী মানুষ এগিয়ে আসলে ছেলেটাকে চিকিৎসা করিয়ে বাঁচাতে পারতাম। সাইফের বাবা রুহুল আমীন বলেন, ‘ছেলের বয়স যখন দুই বছর তখন থেকেই এই সমস্যা দেখা দেয়। চারটা বছর ধরে যা কামাই করেছি সব ছেলের পিছনে ব্যয় করেছি। অনেক ধার -দেনাও করেছি ছেলের চিকিৎসার জন্য। ডাক্তার বলেছেন দেশে আর কোন চিকিৎসা নেই,মাদ্রাজ নিতে হবে। সেখানে চিকিৎসা করানোর জন্য আমার আর কোন পথ নেই। সবাই এগিয়ে আসলে ছেলেটাকে বাঁচাতে পারতাম।ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন,’ছেলটি অনেকদিন যাবৎ জটিল রোগে ভুগছে। অনেক চিকিৎসার পরেও সুস্থ হয়ে উঠেনি। এ দিকে তার চিকিৎসার পিছনেই সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে অসহায় পরিবারটির। যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে সুন্দর জীবন ফিরে পেত সাইফ।