নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের চন্ডিদাসগাঁতীর বাসিন্দা ও সিরাজগঞ্জ ইসলামীয়া কলেজের ছাত্রী ধর্ষনের দায়ে জেল হাজতে থাকা ধর্ষক ফাতিন ইসরাক অর্ককে বাঁচাতে লম্পট বাবা ও যমুনা ডিগ্রী কলেজের দুর্নীতিবাজ উপাধ্যক্ষ জাকির হোসেন বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নানা মহলে বিভিন্ন ধরনের তদবির করছেন। এমনকি ছেলেকে নির্দোষ দাবী করে আদালতে জামিনেরও আবেদন করেছেন। এনিয়ে সিরাজগঞ্জ সচেতনমহলসহ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। একদিকে ধর্ষনকারীর বাবা অন্যদিকে লম্পট হওয়ায় উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকিরের ভয়ে যমুনা ডিগ্রী কলেজে শিক্ষিকা ও ছাত্রী এবং ছাত্রীদের অভিভাবকরাও নানা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। লম্পট জাকিরের কারনে নতুন বছরে অভিভাবকরাও কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করাতে অনীহা প্রকাশ করছে। সচেতন মহল অবিলম্বে ধর্ষনকারীর বিচার সম্পন্ন ও ধর্ষকের বাবা লম্পট জাকিরকে যমুনা কলেজ থেকে অপসারনের দাবী জানিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বৎসর আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যমুনা কলেজের দুর্নীতিবাজ উপাধক্ষ্য জাকির হোসেনের ছেলে ছাত্রদল কর্মী ফাতিন ইসরাক অর্কের সাথে শিয়ালকোলের চন্ডিদাসগাঁতী গ্রামের বাসিন্দা ও ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রী প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সুবাদে ২০শে জুন ওই ছাত্রীকে জরুরী কথা আছে বলে চন্ডিদাসগাঁতী বাজারে আসতে বলে। পরে ওই ছাত্রী চন্ডিদাসগাঁতী বাজারে আসলে তাকে মোটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে রায়গঞ্জে তার বন্ধুর বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং সেখানে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে। পরের দিন বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের সেঞ্চুরী আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওঠে এবং একাধিকবার ধর্ষন করে। পরবর্তীতে বিয়ের কথা বললে সে এবং তার লম্পট বাবা জাকির হোসেন অস্বীকার করে। এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে সদর থানায় ধর্ষন মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষক অর্ককে আটক করে এবং আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। জেলহাজতে পাঠানোর পর থেকেই লম্পট বাবা যমুনা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ জাকির হোসেন ছেলেকে বাঁচাতে বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে নির্দোষ দাবী করে উল্টো-পাল্টা কথা বলছেন।
এদিকে, তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় ২০২০ সালে উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহন করেন জাকির হোসেন। দীর্ঘ তিন বছর পর গত বছরের ২৫ অক্টোবর ম্যানেজিং কমিটি শামসুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব প্রদানের পর কলেজের কোন হিসেবে-নিকেশ, আলমারি চাবি, চেয়ার, রেজুলেশন খাতা এমনকি কলেজের মোবাইলে বুঝে দেয়া হয়নি তাকে। তাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে না বসিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়ে রেখে জাকির হোসেন অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতেন। এছাড়াও জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকালে নিজেই অধ্যক্ষ পদে নিযয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেই আবেদন করেছিল। নিজেই যাচাই-বাচাই করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ জানতে পেরে সেটি বাতিল করেছেন। গভর্ণিংবডির সভাপতি মো: আনোয়ার হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলমকে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে নিয়োগ দিতে অনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করলে সে রাজি না হওয়ায় মো: শামসুল আলমকে ১৪ জানুয়ারী ভারপ্রাপ্ত পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন সভাপতি। পুনরায় গভর্নিংবডি মিটিংয়ের মাধ্যমে মো. আব্দুস সামাদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও ব্যাংক পাওয়াসহ কোন কিছুই বুঝিয়ে দেয়নি। এছাড়াও কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি রশিদ না দিয়ে, শিক্ষকদের নিকট থেকে অডিটের কথা বলে ও বাসাভাড়ার নামেও নানা টাকা আত্মসাত করেছেন। এ ছাড়াও সম্প্রতি রেজুলেশন বহি ও নোটিশ বহি গত ০২/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখে দেখার কথা বলে প্রতারনার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে নিয়ে নেয় এবং তার ভায়রা কলেজের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফারুকের যোগসাজসে পুনরায় দুর্নীতিবাজ জাকির হোসেনকে কে সম্পুর্ন অবৈধভাবে সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়া রাতের আধারে রেজুলেশন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ নিয়ে গত ০৬/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখে থানায় লিখিত অভিযোগও দেয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়াও জাকির হোসেন বিভিন্ন সময় তিনি ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের সাথে অশোভন আচরন ও কুরুচিপুর্ন কথা বলেন বলে অনেকে জানিয়েছেন। বিএনপি কর্মী হলেও তার ভায়রা কলেজের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফারুক তার পক্ষে নিয়ে নানা কলেজের নানা অপকর্মে সহযোগিতা করছেন। সম্প্রতি গভর্নিংবডির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে পরিবর্তন করে নতুন সভাপতি মনোনয়ন করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী ডিও লেটার দেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ উপাধ্যক্ষ বিএনপি কর্মী উপাধ্যক্ষ জাকির হোসেন এমপির ডিও লেটারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার ভায়রাকে সভাপতি হিসেবে বজায় রাখতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্টো এমপি মহোদয়ের ডিও লেটার গ্রহণ না করার জন্য অভিযোগ দিয়েছেন। একজন বিএনপি কর্মী জাকির হোসেন কিভাবে আওয়ামীলীগের এমপির বৈধ চিঠিকে অবৈধ উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরন করে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যমুনা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষিকা এবং ছাত্রীরা জানান, দুর্নীতিবাজ উপাধ্যাক্ষ জাকিরের (বর্তমান অবৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল) কারনে কলেজে শিক্ষা পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। লম্পট হবার কারনে আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি। কারণ তার ছেলে একজন ধর্ষক। সে নিজে একজন লম্পট। কলেজে পড়াশোনা করাতে এবং করতেও আমাদের লজ্জাবোধ হচ্ছে। এমন বর্তমানে অভিভাবকরাও কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করাতে অনীহা প্রকাশ করছে। কলেজের সভাপতি তার আপন ভায়রা আনোয়ার হোসেন ফারুক। বর্তমানে গোপন রেজুলেশনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে রয়েছেন। সে কারনে ভয়ে আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমরা অবিলম্বে উপাধ্যক্ষ লম্পট ও দুর্নীতিবাজ জাকিরের অপসারন দাবী করছি একই সাথে তার ভায়রাকেও কলেজের সভাপতি থেকে অপসারনের দাবী করছি।
যমুনা ডিগ্রী কলেজের আশপাশের অভিভাবকরা জানান, যে কলেজের উপাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) জাকির হোসেন একজন দুর্নীতিবাজ ও লম্পট এবং তার ছেলে ছাত্রদল কর্মী অর্ক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষন করেছে। সেই কলেজে আমরা ছাত্রীদের ভর্তি করাতে ভয় পাচ্ছি। লম্পট ও দুর্নীতিবাজ উপাধ্যক্ষ অপসারিত হলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করাতে যেতে পারে। নচেত ভর্তি করা সম্ভব না।