দৃশ্যপট ক্রীড়া ডেস্কঃ
জার্মানির বার্লিনে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াই করল স্পেন। আর শেষ মেশ ইংলিশদের হারিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর উদ্ধার করল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট। ২০১২ সালে ইতালিকে উড়িয়ে শেষবারের মতো শিরোপা জিতেছিল স্পেন। এরপর ১২ বছরের অপেক্ষার শেষ হলো বার্লিনে।
সোমবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় জার্মানির বার্লিনে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে স্প্যানিশরা। নিকো উইলিয়ামসের গোলে এগিয়ে যাওয়া স্প্যানিশদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান কোল পালমার। আর ৮৬তম মিনিটে মিকেল ওইয়ারজাবাল গোল করে স্পেনকে এনে দেন চতুর্থ ইউরোর শিরোপা।
শুরুর গতিহীন, ঢিমেতালের ফুটবল পাল্টে গেল বিরতির পর। এগিয়ে গিয়ে আক্রমণের ঝড় তুলল স্পেন। ওই ঝড়ের মাঝেই দলের আশা হয়ে এলেন কোল পালমার, বদলি নেমেই দুর্দান্ত গোলে টানলেন সমতা। তবে এই স্পেন তো অন্য ধাঁচে গড়া। খেই না হারিয়ে, চাপ ধরে রেখে শেষ দিকে আরেকবার জালে বল জড়াল তারা। ১২ বছর পর আবার মাথায় তুলল ইউরোপ সেরার মুকুট।
সর্বোচ্চ ইউরো জয়ের রেকর্ড ছিল যৌথভাবে স্পেন ও জার্মানির। গতিময় ও নান্দনিক ফুটবলের পসরা মেলে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেটা নিজের করে নিল স্প্যানিশরা।
শুরুতেই নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টায় ছিল তারা, যদিও তারাও পারছিল না উল্লেখযোগ্য কিছু করতে। তাইতো, প্রথমার্ধে দুই গোলরক্ষকের কাউকেই কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি আসর জুড়ে দ্যুতি ছড়ানো নিকো উইলিয়ামস দশম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন, তবে দারুণ এক স্লাইড ট্যাকলে তাকে রুখে দেন ডিফেন্ডার জন স্টোন্স। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সতীর্থের ফ্রি কিকে ছয় গজ বক্সে ফাঁকায় বল পান ফিল ফোডেন; কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতে মাঝমাঠের ভরসা রদ্রিকে বসিয়ে আরেক মিডফিল্ডার মার্তিন জুবিমেন্দিকে নামান স্পেন কোচ। এবং দ্বিতীয় মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় তারা। গোলটির সঙ্গে জড়িয়ে পুরো আসরে ক্রমেই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ইয়ামাল-উইলিয়ামস জুটি। ডান উইং ধরে শাণানো আক্রমণে সতীর্থের বল পেয়ে একটু এগিয়ে বক্সে অন্য পাশে উইলিয়ামসকে খুঁজে নেন ইয়ামাল। আর বিনা বাধায় দারুণ কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন নিকো।
শুরু থেকে নিজের হয়ে ছিলেন হ্যারি কেইন। তাই আক্রমণের ধার বাড়াতে তাকে বসিয়ে সেমি-ফাইনালের জয়ের নায়ক অলি ওয়াটকিন্সকে নামান ইংল্যান্ড কোচ। ৬৬তম মিনিটে গোল পেতে পারতেন ইয়ামাল। ওলমোর পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকতে গিয়ে একটু গড়মিল হয়ে যায়। তবে বল হারাননি তিনি। প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে শট নেন, ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন পিকফোর্ড।
ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে দারুণ এক গোলে সমতা টানেন তিন মিনিট আগেই বদলি নামা পালমার। বুকায়ো সাকার পাস বক্সে ধরে শট নেওয়ার মতো জায়গা না পেয়ে ব্যাকপাস করেন বেলিংহ্যাম, আর ২২ গজ দূর থেকে জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন চেলসি ফরোয়ার্ড। সেমিফাইনালে শেষ দিকে বদলি নেমে পালমারের অ্যাসিস্টেই গোল করে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন ওয়াটকিন্স।
তবে লিড হারালেও ম্যাচের হাল ছাড়েনি স্পেন। একের পর এক সুযোগ তৈরি করে যাচ্ছিল স্প্যানিশরা। ম্যাচের চার মিনিট পর বাঁ দিক থেকে ছয় গজ বক্সের মুখে দারুণ এক পাস বাড়ান মার্ক কুকুরেল্লা। আর ডান পায়ের স্লাইড শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মোরাতার বদলি নামা ওইয়ারজাবাল।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। ডেকলান রাইসের হেড গোলরক্ষক উনাই সিমন ঝাঁপিয়ে ফেরানোর পর, ফিরতি শট নেন মার্ক গেয়ি; কিন্তু গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ওলমো। সুযোগ ছিল তারপরও, কিন্তু রাইসের পরের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
আর তাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালে হারের স্বাদ নিতে হলো ইংলিশদের।