আমিরুল ইসলাম, সংবাদদাতা:
প্রথমে ঘরের ভেতরে দুজনকে দেখতে পাই। তাদের একজন আমাকে বলে চুপ থাক! কথা বলবি না। আমি ওদের একজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে ওদের একজন পেছন থেকে শক্ত কিছু দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এতে আমি মেঝেতে পড়ে যাই। শুধু আমি নই আমার বোনকেও বেঁধে রেখেছিল। ওরা ৫-৭ জন আমাদের বাড়িতে দুই ঘণ্টার মতো অবস্থান করে। তারা আমার বাবার হালখাতার টাকাসহ প্রায় ৮ লাখ টাকা ও ৬ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে যায়। মাথায় আঘাতের ব্যান্ডেজ নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আবু হাসেম (২২)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের হজরত আলীর বাড়িতে এলোমেলো অবস্থায় সবকিছু পড়ে আছে। বিছানায় ব্যান্ডেজ অবস্থায় পড়ে আছে আবু হাসেম। মেঝেতে রক্তের ছিটেফোঁটা রয়েছে।
ভুক্তভোগী হজরতের আলীর মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, আমার বাবা-মাকে অজ্ঞান অবস্থায় ঘরের ভেতরে রেখে ও ছোটভাই আবু হাসেমকে হাত-পা বেঁধে রেখে প্রচুর মারধর করেছে ডাকাতরা। ওরা আমাকেও বেঁধে রেখেছিল। সবার হাতে ছুড়ি, হাতুড়িসহ নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র ছিল। শেষের দিকে আমার বাচ্চা রাফসার গলায় ছুড়ি ধরে জিম্মি করে সোনা আরও আছে কি না জানতে চায়? পরে তারা নগদ প্রায় ৮ লাখ টাকা ও ৬ ভরি সোনা লুট করে।
কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ভোরে অজ্ঞান অবস্থায় দুজনকে ভর্তি করা হয়। তাদেরকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা না যাওয়ার পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই মুহূর্তে আশঙ্ক্ষামুক্ত বলে মনে হচ্ছে।
কামারখন্দ থানার ওসি মোহা রেজাউল ইসলাম বলেন, অজ্ঞান করে বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। লিখিত অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ডাকাতির ঘটনায় ওসিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য চলতি মাসেই শুধু রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের তাজুরপাড়া, বাড়াকান্দি ও শ্যামপুর এলাকায় ৪টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং গত জুন মাসে উপজেলার জামতৈল বাজার সংলগ্ন দিন দুপুরে বাসার গ্রিল কেটে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট হয় । এই ধরনের ডাকাতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই একজনকে গ্রেপ্তার করলেও লুট হওয়া কোনো মালামাল এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি কামারখন্দ পুলিশ। এ নিয়ে জনমনে একধরনের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।