নওগাঁ প্রতিনিধি:
গত সোমবার (৫ আগষ্ট) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় এক অস্থির পরিবেশের। স্ব স্ব জায়গার দায়িত্ব পালনের কর্তব্য থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখেন সারা দেশের পুলিশ সদস্যরা।
অবশেষে সারা দেশের ন্যায় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে নওগাঁ জেলা পুলিশ। সোমবার (১২ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের মুক্তির মোড়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফেকিং ব্যবস্থা চালুর মধ্যে দিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা। আর নিজেদের পোশাকে পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দেওয়ায় স্বস্তি নেমে এসেছে জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে।
এদিকে কাজে ফেরায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। অপরদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত সকল পুলিশ সদস্য, ছাত্রছাত্রী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং দায়িত্বরত সাংবাদিকদের রজনীগন্ধার গুচ্ছ দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেসময় তাদের পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতারা।
এ সময় পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবীব খানসহ জেলা পুলিশের সকল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের মধ্যে সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, যুগ্ন আহবায়ক মামুনুর রহমান রিপন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়দের মধ্যে তানজীম বিন বারী, আরমান হোসেন, সুরাইয়া জামান মুন, সাদমান সাকিব, হানিফ, রাফি এবং আবির উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যর মাঠে না থাকায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে যানজট নিরসনের নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই কার্যক্রম চালিয়েছেন তাঁরা। আর তাদের দায়িত্ব পালন দেখে খুশি সাধারণ মানুষসহ সচেতন মহলরা।
ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা সুমাইয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশের অবর্তমানে আমরা রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেড়াতে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছি। এসময় সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুনতে হয়েছে নানা জনের নানা বাঁকা কথাও। অনেকে আবার খারাপ আচারনও করছেন। কিন্তু আমরা এসব কথায় কান না দিয়ে দেশকে ভালোবেসে যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন যেহেতু পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছে। সেজন্য আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। আমরা চাই তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, মাঠ পর্যায়ে মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্থান হচ্ছে পুলিশ। আমরা চাই পুলিশ সেই আগের জায়গায় ফিরে আসুক। এজন্য আজকে আমরা পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিলাম। পুলিশ আগের মত মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করবে এবং মানুষের সাথে মিলেমিশে তারা প্রমাণ করবে পুলিশ মানুষের বন্ধু।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, কয়েকদিন আগে থেকেই থানার কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ টহল চলমান ছিলো। তবে জেলায় কোন ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। আজ থেকে পুরোদমে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা। মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাবে। খুব দ্রুত জনগণের মধ্যে স্বস্থি ফিরে আসবে। তাছাড়া জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ আগে যেমন সর্বদা নিয়োজিত ছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও থাকবে বলে জানান পুলিশের উর্দ্ধতন এই কর্মকর্তা।