ঈশ্বরগঞ্জ(ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক:
বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য সরকারিভাবে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ আসলে তা তুলতে গেলে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে। শুধু তা-ই নয়, স্লিপের বরাদ্দকৃত ২০ হাজার টাকা তুলতে গেলেও প্রত্যয়নের নামে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় ওই কর্মকর্তাকে। এ ছাড়া কোনো বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গেলেও তার জন্য রাখতে হয় মোটা অঙ্কের বিশেষ (ঘুষ) খাম। শিক্ষকদের জিম্মিকরে এভাবেই দিনের পর দিন নিজের ঘুষের সম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ ওঠেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফার হাকিমের বিরুদ্ধে।অভিযোগ রয়েছে, বদলীকৃত শিক্ষকদের যোগদানের সময়ও ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে। এ ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া তাঁদের ফাইল আটকে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেইনস, ওয়াশ ব্লক, প্লেয়িং এক্সেসসরিসহ বিভিন্নউন্নয়নমূলক খাত থেকে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই অবস্থায় কোনো শিক্ষক ঘুষ দিতে না চাইলে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার হুমকি-ধামকি দেন ওই কর্মকর্তা। ফলে চাকুরী হারানোর ভয়ে কেউ-ই মুখ খুলতে চাননা।এদিকে গতকাল সোমবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফার হাকিমের বিরুদ্ধেউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন, কাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজমুল হক। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক অভিযোগে উল্লেখ করেন- শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর বিদ্যালয়পরিদর্শন করে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নেন। শুধু তা-ই নয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের স্লিপের বরাদ্দবাবদ ২০ হাজার টাকা আসে। সেই টাকা তুলতে গেলে তাঁর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। টাকা না দেওয়ায় স্লিপের ২০ হাজার টাকা আটকে রাখেন ওই কর্মকর্তা। এরপর ঘুষ না দিয়ে টাকা চাইতে গেলে তাঁকে চরম শিক্ষা দেওয়ারও হুমকি-ধামকি দেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
একপর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে একথাও বলেন যে, ‘এমন শিক্ষা দিব আপনাকে, আপনার দুর্দশা দেখে বাকিরা এমনিতেই নাখ-মুখ লড়ানো বন্ধ করে দিবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক প্রতিদিনের দৃশ্যপটকে বলেন- ‘আমরা শিক্ষকদেরকে উনি (টিইও) জিম্মি করে রেখেছেন। এতকিছুর পরও আমরা কেউ-ই চাকুরী হারানোর ভয়ে কারোর কাছে মুখ খুলতে পারছিনা। তবে আমরা সকলেই চাই উনার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তাহলেই উনার যতসব অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি, কুকীর্তি বেরিয়ে আসবে’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিদ্যালয় প্রধান জানান, সম্প্রতি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ফাইল স্বাক্ষর বাবদ ২৪ হাজার টাকা ঘুষ নেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। আরেকজনের কাছ থেকে নেন ৭ হাজার, আরেক প্রয়াত শিক্ষকের স্ত্রীরকাছ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ঘুষ নেন ওই কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) নিলুফার হাকিম বলেন-‘ প্রধান শিক্ষক মো. নাজমুল হককে আমি সম্প্রতিএকটি বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছিলাম। উনার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সেটা আমি জেলা প্রাথমিকশিক্ষা অফিসে পাঠাই। এরপর তাঁকে ৩ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা সে অফিস থেকে কপিটি নেয়নি। ওই অবস্থায় আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। এ ছাড়াবাকি অন্যান্য অভিযোগগুলোও সত্য নয়’। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন- ‘অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি খুবই সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগেরসত্যতা পাওয়া গেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করবো’।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান খান বলেন- ‘ অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।