বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে আমি অনেক কষ্ট করেছি জেল জুলুম খেটেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি যখন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব, আমি যখন হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারব, যখন নতুন একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে তখন নিশ্চয় আমার এই কষ্টটাকে সফল বলে মনে করব। আজকে সেই জায়গায় আমরা এসেছি।
বৃহষ্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ মাঠে এক জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, আমরা এই দেশের আওয়ামীলীগকে পরাজিত করেছি, ওদেরকে ক্ষমতা থেকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছি। ওরা গেছে তো গেছে দেশে আর নাই। পালায় ভারত চলে গেছে। আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, অনেক মূল্য দিয়েছি। আমাদের অনেক ছাত্রদের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে, চাকরির বয়স শেষ হয়ে গিয়েছে, চাকরি পাই নাই। দরখাস্ত করতে পারি নাই, পদে পদে বাধা দিয়েছে আওয়ামীলীগ। এদেশের মানুষের যে মৌলিক অধিকার সেটা তারা বঞ্চিত করেছে। আজকে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছেন, নতুন করে এদেশটাকে তৈরি করবার। আমরা আমাদের যে সংবিধানের অধীনে চলি সেই সংবিধানকে এমনভাবে করব যাতে করে কোন মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। দেশের সাধারন মানুষ যাতে তার পাওনা ঠিকমত বুঝে পাই।
তিনি বলেন, মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করতে হবে। শুধু চাকরির ক্ষেত্রে নয়, সব কিছুতেই। আর ঘুষ বন্ধ করতে হবে। এটাই এমন একটা ব্যাধি হয়ে গেছে, অসুখ হয়ে গেছে, যেখানে সেখানে ঘুষ দিতে হয়, আমরা ঘুষ দিবো না।
বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগের ভয়ভীতির কথা উল্লেখ করে বলেন- বন্ধুগণ, একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যদি ভয়ে কথা না বলি আওয়ামী লীগ একছত্র ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে গেল, পিসলো, মারলো, মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামাী করে দিল আমরা কোন কথাই বললাম না, তাহলে হবে না। আমাদের কথা বলতে হবে। অন্যায় আমরা করতে দিবো না।
দেশের হিন্দু সম্প্রদায় সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন-আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করছে। এমনকি ভারতের পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, এদেশে এখন হিন্দু ভাইয়েরা অনেক নিরাপদে আছে।
যুবকদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তোমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছ, অনেক কষ্ট করেছ, তোমরা অনেকে প্রান দিয়েছ, জীবন দিয়েছ। এখন তোমাদের দায়িত্ব দেশটাকে গড়ে তোলা। আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কেউ খারাপ কথা বলুক শুনতে চাই না। কেউ বলুক যে তোমরা চাদাবাজী করছ শুনতে চাই না। আমি তোমাদের কাছে একটি সুন্দর রঙ্গীন বাংলাদেশ দেখতে চাই।
অন্তঃবর্তী কালীন সরকার সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার কোন রাজনৈতিক সরকার নয়, এ সরকার নির্দলীয় সরকার, অন্তঃবর্তী কালীন সরকার। এ সরকার অল্প সময়ের মধ্যে এদেশটাকে সুষ্ঠ আইন শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনবে, নির্বাচনের জন্য একটা পরিবেশ তৈরি করবে। আর বিচার বিভাগে যেন মানুষ বিচার পায় সে ব্যবস্থা করবে।
আমাদের এই আন্দোলনে হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে রাজপথে গুলি করে মেরেছে। আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। রিজার্ভের টাকা চুরি করেছে, ব্যাংকের টাকা চুরি করেছে, প্রত্যেকটা জায়গা থেকে চুরি করেছে তারা।
তিনি আরও বলেন, এতদিন আপনারা আপনাদের কথা বলার সুযোগ পান নাই। যারা কথা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে জেলে পুরে দিয়েছে। তবে রাণীশংকৈলে একটু কম, পীরগঞ্জে আর একটু কম, বালিয়াডাঙ্গীতেও কম, হরিপুরে কম কিন্তু ঠাকুরগাও সদরে ভয়ংকর অত্যাচার হয়েছে। গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে ঠাকুরগাঁও সদরে প্রায় সাত হাজার লোকের উপর মামলা হামলা হয়েছে। সারাদেশে প্রায় ৬০ লক্ষ মামলা দিয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার। প্রায় হাজার হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। এবং নিখোজ, গুম করেছে প্রায় হাজার খানেক। এরপরেও আমরা যখন আন্দোলন করেছি ১৫/১৬ বছর ধরে বারবার আমরা আন্দোলন করার চেষ্টা করেছি। তারপরও তারা কথা শুনেনি। তাদের আমলে লুটপাট করেছে যেমন খুশি তেমন।
সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য জেড মতুর্জা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওবায়দুল মাসুদ। এছাড়াও সুলতানুল ফেরদৌস ন¤্র চৌধুরী, পয়গাম আলী, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকুল মজুমদার, পৌর বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান আলী সহ, ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। জনসভাটি পরিচালনা করেন, উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আল্লামা আল ওয়াদুদ বিন নুর আলিফ ও পৌর বিনপির সাধারন সম্পাদক মহসিন আলী।