মেহেরপুর প্রতিনিধি :
মেহেরপুরে বিড়াল ও কুকুরের উপদ্রবে দিশেহারা মানুষ। প্রতিদিন প্রায় ১’শ মানুষ বিড়াল ও কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এজন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ১২৩ নং রুমে জলাতঙ্ক রোগের টিকা গ্রহণে ভীড় বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর), বেলা ১১ টার দিকে সরেজমিনে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্ক টিকা গ্রহণে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী মানুষকে।
কয়েকজন স্টাফ নার্সও ব্যস্ত রয়েছেন জলাতঙ্ক রোগীদের টিকা দেওয়ার কাজে। তিনারা জানান, গত ৩ দিনে প্রায় ৩’শর কাছাকাছি রোগী জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন নিয়েছেন। শনিবার ১’শ ছাড়িয়ে যাবে। টিকা গ্রহণে আসা রোগীদের অধিকাংশই শিশু এবং বিড়ালের কামড় ও আঁচড়ে টিকা গ্রহণে এসেছেন। তবে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যাও কম নয়।
তিনারা জানান, বিড়াল কিংবা কুকুরে কামড়ালে জলাতঙ্ক টিকা গ্রহণের ৩ মাসের মধ্যে আর টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ৩ মাস পর কামড়ালে আবারও টিকা গ্রহণ করতে হবে।
জলাতঙ্ক একটি ভয়ানক রোগ, এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য। সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭-১০ দিনের মধ্যে রোগী মৃত্যুবরণ করে। কোন এন্টিভাইরাল ঔষধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। শুধুমাত্র উপশমমূলক চিকিৎসা প্রদান সম্ভব। তাই কুকুর, বিড়াল, বাদুড়, ঘোড়া, ভোঁদড় ও শিয়ালে কামড় ও আঁচড় দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা গ্রহণ করলে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান, গাংনী রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক পুষ্টিবিদ তরিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় জলাতঙ্ক রোগের টিকা একমাত্র জেনারেল হাসপাতালেই মেলে। সে হিসেবে গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদেরও এখানে পাঠানো হয়।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ডা. আশিক জানান, মাঝে মধ্যেই কুকুর কিংবা বিড়ালে কামড়ানো রোগী আসলে টিটেনাস ইঞ্জেকশন দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেহেতু এখানে জলাতঙ্ক রোগের টিকার ব্যবস্থা নেই।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে টিকা গ্রহণ করতে আসা কয়েকজন জানান, তাদের বাড়ি গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা সরবরাহ রয়েছে বলেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে এখানে আসতে হয়েছে। কারণ বাইরে টিকা কেনা ব্যয়বহুল। তবে প্রথম ডোজ সম্পন্ন হলেও আরও দু’দিন আসতে হবে টিকা নিতে ভেবে শঙ্কিত তারা। কারণ হিসেবে জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতি, হাসপাতাল এরিয়ায় যত্রতত্র মোটরসাইকেল রাখার অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা এবং মোটরসাইকেল রাখায় অবৈধভাবে অর্থ আদায়। যদি অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে এ টিকার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে রোগীদের ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে যেতো বলে জানান তিনারা।
তাছাড়া গ্রামের বসতবাড়িতে পালিত বিড়াল ও কুকুরগুলোকেও টিকা প্রদানের মাধ্যমেও জলাতঙ্ক রোগের ঝুঁকি থেকে বিশেষ করে শিশুদের বাঁচানো সম্ভব বলেও তিনারা মনে করেন।