প্রতিদিনের দৃশ্যপট ডেস্ক:
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহহমুদ টুকু বলেছেন, আওয়ামীলীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, সব দলকে বন্ধ করে একলা থাকতে চেয়েছে। তারা এক দলে বিশ্বাস করে। সেই জন্য পতন হলে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে একটা রেকর্ড হয়ে গেল এই দলটি ক্ষমতাচ্যুত দুইবার হয়েছে। দুইবারই বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এবার তো ২০-২২ বছর পরে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আল্লাহর রহমতে আওয়ামীলীগ আগামী ৫০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন চত্বরে জেলা বিএনপি আয়োজিত সম্প্রতির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘ দুই বছর পর নিজ জেলার মাটিতে আয়োজিত সমাবেশে টুকু বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের জেল জুলুম অত্যাচার হত্যা হামলার সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটেছে সাইদ মুগ্ধদের রক্ত দিয়ে। আমার পরিবার গত ১শ বছর যাবত সিরাজগঞ্জের মানুষের পাশে আছে। আমরা সিরাজগঞ্জের মানুষের সেবায় নিয়োজিত। তাই আমরা বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই। সরকারে যাই, আবার ফিরে আসি। গত ১৬ বছর সিরাজগঞ্জে আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হতে পারি নাই, বাজারে আসতে পারি নাই ওসি সাহেবের অনুমতি ছাড়া। বাজারে আসতে দেয় নাই, সেখানে নাকি রাজার বাড়ি আছে। আমি জানি না, বাজারে কোন রাজার বাড়ি যে আমরা আসতে পারবো না। আমি বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলাম শুনলাম হাসিনার আদালত আমাকে সাজা দিয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম, হাসিনার এই অন্যায় বিচার মানবো না, হাসিনার জেলে যাবো না। বিদেশে থেকেই নেতাদের সাথে কথা বলবো। আন্দোলন সংগঠিত করবো। আমি তাই করেছি।
সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামীলীগের রাজপরিবারের সেই রাজা নাকি বলেছে আমি আর ফিরবো না। আমি ফিরেছি, আমি পালাই নাই। আজকে যারা উন্নয়ন উন্নয়ন করে। উন্নয়ন মানে দূর্নীতি. উন্নয়ন মানে কোটি কোটি টাকা লুট করা, লুট করে বাংলাদেশকে ফোকলা করে গেছে। প্রশাসন পুলিশ নষ্ট করে গেছে।
বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা টুকু আরও বলেন, আমার বাড়ির সামনে মোটর সাইকেল নিয়ে যায়, দম্ভ দেখিয়ে বলে টুকুর শার্ট যেন লাল হয়ে যায়। টুকু আর কোনদিন আসবে না। টুকু এসেছে, লক্ষ জনতাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কোনদিন পালিয়ে যাই নাই। তারা ৯৬ সালে মাফ চেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ৭৫ এর পর সিরাজগঞ্জে কোন আওয়ামীলীগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবারও পালিয়েছে, আর নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না। আমার নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পালিয়ে যায় নাই, খালেদা জিয়া পালিয়ে যায় নাই। ইলেকশন দিয়েছে বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করে নাই।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে টুকু বলেন, আমাদের সংগ্রাম শুরু। আমরা আজকে থেকে প্রতিজ্ঞা করি। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করবো। কারও সাথে বেয়াদবি করবো না। যারা বেয়াদবি করবে তাদের স্থান বিএনপিতে হবে না। আমার চেয়ারম্যানের ক্লিয়ার নির্দেশ আছে। সবাই ভালো হয়ে যাও, মানুষের সাথী হয়। ১৬ বছর মানুষ কষ্ট করেছে, সেই মানুষকে যে কর্মীরা কষ্ট দিবে তারা আমার কর্মী না। তারা আওয়ামীলীগের এজেন্ট।
আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের যে নেত্রী হাজারো মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করে পালিয়ে গেছে তার বিচার বাংলার মাটিতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সব দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। সিরাজগঞ্জের আওয়ামীলীগের ভাইদের বলি, আপনারা সবাই খারাপ তা নয়, কিন্তু যারা খারাপ কাজ করেছে তাদের কোন রেহাই দেওয়া হবে না। আপনারা যারা ভালো আছেন তারা সতভাবে রাজনীতি করেন। বিএনপি কোন বাঁধা দেবে না। কিন্তু যারা সিরাজগঞ্জে রক্ত বইয়েছে, শেষের দিন পর্যন্ত আমার ৪টা কর্মীকে হত্যা করেছে তাদের বিচার সিরাজগঞ্জের মাটিতে হবে। যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তাদের বিচারও হবে।
তিনি বলেন, ৭ মার্চ ইতিহাসের কোন মাইলফলক নয়। যে জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণার পরিবর্তে জয় বাংলা জয় পাকিস্তান দিয়েছে, সেটা স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পারে না। বেশি খোচাখুচি করবেন না, ইতিহাসের আসল রুপ বেরিয়ে পড়বে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবর রহমান লেবু, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, নূর কায়েম সবুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ সুইট, মির্জা মোস্তফা জামানসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, দুই বছর পর বৃহস্পতিবার তিনি জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ শহরে আসেন। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। এরপর ঢাকায় ফিরবেন তিনি।