মাহাবুল ইসলাম, গাংনী প্রতিনিধি:
মেহেরপুরে মাস কলাই চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে আশা করছেন কৃষকরা।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অধিকাংশ এলাকায় মাস কলাইয়ের চাষ চোখে পড়ার মতো। মেহেরপুরের প্রায় প্রতিটা এলাকার সড়কের দু’পাশে দেখা গেছে শুধু কলাই আর কলাইয়ের ক্ষেত। বীজ বপন ও গাছ বেড়ে ওঠার পর বৃষ্টিতে ডুবে যায় অধিকাংশ কলাইয়ের ক্ষেত। পরবর্তীতে বৃষ্টির পানি নেমে ও শুকিয়ে গেলে চাষীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। কারণ বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পরপরই কলাইয়ের গাছ বেড়ে উঠতে শুরু করে। মাঠের অধিকাংশ কলাই ক্ষেতে এখন ফুল ও ফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে কৃষকের। এবছর ভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও কলাই ক্ষেতে পোকামাকড়ের আনাগোনা দেখা যায়। যা দমনে এখন অবধি কীটনাশক স্প্রে চলমান রয়েছে।
রোববার (২০ অক্টোবর), সকাল থেকে বিকেল অবধি জেলার করমদী, পলাশীপাড়া, হিন্দা, দুর্লভপুর, ভরাট, দেবীপুর, মাইলমারী, ধানখোলা, হাড়িয়াদহ, ভাটপাড়া, দিঘলকান্দি, সিংহাটি, বারাদী, মটমুড়া, চর গোয়ালগ্রাম, নিশিপুর, রামনগর ও হাড়াভাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠে গিয়ে বিঘার পর বিঘা মাস কলাইয়ের চাষ চোখে মেলে।
করমদী গ্রামের দাঁড়ের মাঠ ও নামের মাঠে গিয়ে আলাপকালে মাদ্রাসা পাড়ার টিক্কা জানান, আমার ৩ বিঘা কলাইয়ের আবাদ রয়েছে। ফসল ভালো থাকলেও এখন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণ রোধকল্পে কীটনাশক প্রয়োগের চিন্তা ভাবনা নিচ্ছি।
একই গ্রামের মাসুদ রানা জানান, মাঠে এবার পর্যাপ্ত পরিমাণে কলাই রয়েছে। উপর বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন অনেক ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
শাহাবুর পাড়ার মাঠে এনামুল হক জানান, আমার ২ বিঘা জমিতে কলাইয়ের আবাদ করতে খরচ হয়েছে মোট ৫ হাজার টাকা। কলাই চাষে খরচ কম। রোগবালাই না থাকলে ফলনও ভালো হয়ে থাকে। এবারও ফলন ভালো হয়েছে। তিনি ২ বিঘা জমির কলাই ক্ষেত থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকার কলাই বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী।
একই মাঠের শাহজামাল জানান, প্রতি বিঘা জমির কলাই চাষে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। বৃষ্টি পরবর্তী পোকার আক্রমণে ভলিউম কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। বিঘা প্রতি জমিতে ৭/৮ মণ কলাই উৎপাদিত হবে বলে তিনি মনে করেন। যা থেকে প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
কৃষি বিভাগ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনরকম সাহায্য সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পাননি বলে জানান।
তবে নাম প্রকাশে একাধিক চাষির অভিযোগ কৃষি বিভাগ থেকে নাকি বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত চাষিরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর শেষ সময়ে যারা এ প্রণোদনা পেয়েছেন তারা বীজ বাজারে বিক্রি করেছেন, কেউ কেউ ভাতের সাথে ডাল হিসেবে খেয়েছেন।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোর থেকে এবার অধিক পরিমাণ জমিতে কলাই চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় কৃষকরা তাদের আশানুরূপ ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।